রমযান মাস সংশ্লিষ্ট কিছু প্রচলিত ভুল-ভ্রান্তি

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর, আর সালাত ও সালাম তার উপর, যার পরে কোনো নবী নেই। অতঃপর:
কিছু মুসলিম রমযান মাসের আগমনকে বিরক্তি ও অস্বস্তির সাথে গ্রহণ করে। আর তারা এর দ্রুত অতিক্রমণ আশা করে। আপনি তাদেরকে দেখবেন না এর আগমনে খুশি হতে। তারা এর ফযীলত ও বরকতসমূহের চিন্তা করে না। অথচ প্রত্যেক মুসলিমের উচিত হলো রমযান মাসকে আনন্দ ও ব্যাকুলতার সাথে গ্রহণ করা, সিয়াম ও ক্বিয়াম (সালাত) এর ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প হওয়া, সৎকর্ম দ্বারা পরিপূর্ণ করা; যেন সে এ মাস পার করে এমতাবস্থায় যে তার সকল গুনাহ ক্ষমা করা হয়েছে আর তার অবস্থা উন্নত হয়েছে।
ভুলসমূহের অন্যতম হলো—কিছু মুসলিমের রমযান মাসের ফযীলত সম্পর্কে অজ্ঞতা।
তারা এ মাসকে গ্রহণ করে বছরের অন্যান্য মাসের ন্যায়, অথচ এটি ভুল; কারণ সহীহ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﻓُﺘِّﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ، ﻭَﻏُﻠِّﻘَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻭَﺻُﻔِّﺪَﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦُ »
“যখন রমযান আসে, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়, আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়।” [বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন]
অপর একটি বর্ণনায়:
« ﻭَﺳُﻠْﺴِﻠَﺖِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦُ »
“আর শয়তানদেরকে বেড়ি পরানো হয়।”
ভুলসমূহের মধ্যে হলো— কিছু মানুষ রোযার জন্য নিয়তকে নির্দিষ্ট করে না। যদি রোযাদার রমযান মাসের প্রবেশ সম্পর্কে জানে তাহলে তার উপর রোযার নিয়ত নির্দিষ্ট করা আবশ্যক হয়ে যায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে তার কথায় বর্ণিত হয়েছে:
« ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳُﺒَﻴِّﺖِ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ، ﻓَﻠَﺎ ﺻِﻴَﺎﻡَ ﻟَﻪُ »
“যে সিয়ামের নিয়ত রাত্রি হতে নির্দিষ্ট করে না, তার কোনো সিয়াম নেই।” [নাসাঈ বর্ণনা করেছেন]
ভুলসমূহের মধ্যে আরও হলো— কেউ কেউ নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে। অথচ এটি ভুল। বরং অন্তরের নিয়ত নির্দিষ্ট করাই যথেষ্ট। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেন:
“ ﻭﺍﻟﺘﻜﻠﻢ ﺑﺎﻟﻨﻴﺔ ﻟﻴﺲ ﻭﺍﺟﺒﺎ ﺑﺈﺟﻤﺎﻉ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ، ﻓﻌﺎﻣﺔ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﺼﻮﻣﻮﻥ ﺑﺎﻟﻨﻴﺔ ﻭﺻﻮﻣﻬﻢ ﺻﺤﻴﺢ “
“আর মুসলিমদের ঐকমত্যে নিয়ত মুখে বলা ওয়াজিব নয়। কারণ, সাধারণ মুসলিমরা অন্তরে নিয়ত করেই রোযা রাখে, আর এতেই তাদের সাওম বিশুদ্ধ হয়ে যায়।” [আল-ফাতাওয়া খণ্ড নং:২৫, পৃষ্ঠা নং:২৭৫]
ভুলসমূহের মধ্যে আরও হলো— কিছু রোযাদার মাগরিবের আযান অনুসরণ (উত্তর দেওয়া) ত্যাগ করে ইফতারে ব্যস্ত হয়ে যায়। আর এটি ভুল; কেননা রোযাদারের এবং বে-রোযাদার সবার জন্যই সুন্নত হলো মুয়াযযিনের (আযান) অনুসরণ করা এবং সে যা বলে তাই বলা। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺇِﺫَﺍ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻢُ ﺍﻟﻨِّﺪَﺍﺀَ، ﻓَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﻣِﺜْﻞَ ﻣَﺎ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﻤُﺆَﺫِّﻥُ»
“যদি তোমরা ডাক (আযান) শোনো, তবে তোমরা বল যেরূপ মুয়ায্যিন বলেন।” [বুখারী ও মুসলিম একমত] আর মুয়ায্যিনকে অনুসরণ করতে হবে ইফতার করার সাথেও। কারণ মুয়ায্যিনকে অনুসরণ এবং আযান বলার সময় খাওয়ার থেকে নিবৃত্ত থাকার কথা বর্ণিত হয় নি। আল্লাহই অধিক জানেন।
ভুলসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো— ইফতার বিলম্বিত করা। কারণ সুন্নত হলো রোযাদার ওয়াক্ত প্রবেশ নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করবে। এ সম্পর্কে সাহ্ল ইবন সা‘আদ আস-সা‘য়েদী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻻَ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺑِﺨَﻴْﺮٍ ﻣَﺎ ﻋَﺠَّﻠُﻮﺍ ﺍﻟﻔِﻄْﺮَ »
“মানুষ ততক্ষণ কল্যাণে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ইফতার ত্বরান্বিত করবে।” [বুখারী ও মুসলিম একমত]
অনুরূপভাবে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺑﻜِّﺮﻭﺍ ﺑﺎﻹﻓﻄﺎﺭِ، ﻭﺃﺧِّﺮﻭﺍ ﺍﻟﺴﺤﻮﺭَ »
“তোমরা ইফতারকে ত্বরান্বিত কর এবং সাহরীকে বিলম্বিত করো।” [সহীহ আল-জামে‘উস সগীর]
ভুলসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো— ইফতারের সময় এবং পরে দো‘আ করা সম্পর্কে কিছু রোযাদারের অমনোযোগিতা। কারণ ইফতারের সময় দো‘আ করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺛﻼﺙ ﺩﻋﻮﺍﺕ ﻻ ﺗﺮﺩ : ﺩﻋﻮﺓ ﺍﻟﻮﺍﻟﺪ، ﻭﺩﻋﻮﺓ ﺍﻟﺼﺎﺋﻢ، ﻭﺩﻋﻮﺓ ﺍﻟﻤﺴﺎﻓﺮ ».
“তিনটি দো‘আ ফেরত দেওয়া হয় না: পিতার দো‘আ, রোযাদারের দো‘আ এবং মুসাফিরের দো‘আ।” [আহমাদ কর্তৃক বর্ণিত, শাইখ আলবানী একে সহীহ বলেছেন] সহীহ হাদীসে বর্ণিত দো‘আসমূহে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতারের সময় যা পড়তেন তার মধ্যে হলো:
« ﺫَﻫَﺐَ ﺍﻟﻈَّﻤَﺄُ ﻭَﺍﺑْﺘَﻠَّﺖِ ﺍﻟْﻌُﺮُﻭﻕُ، ﻭَﺛَﺒَﺖَ ﺍﻟْﺄَﺟْﺮُ ﺇِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻪُ »
“পিপাসা মিটেছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং সাওয়াব সাব্যস্ত হয়েছে যদি আল্লাহ চান।” [সহীহ সুনান আবু দাউদ]
আর পানাহারের পর বর্ণিত দো‘আর মধ্যে হলো:
« ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻟَﻨَﺎ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﺃَﻃْﻌِﻤْﻨَﺎ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻣِﻨْﻪُ »
“হে আল্লাহ, আমাদেরকে এতে বরকত দিন এবং এ থেকে উত্তম ভক্ষণ করান।” [সহীহ সুনান আত-তিরমিযী]
অথবা তার বাণী:
« ﺍﻟﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺣَﻤْﺪًﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻃَﻴِّﺒًﺎ ﻣُﺒَﺎﺭَﻛًﺎ ﻓِﻴﻪِ ﻏَﻴْﺮَ ﻣُﻮَﺩَّﻉٍ ﻭَﻟَﺎ ﻣُﺴْﺘَﻐْﻨًﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﺭَﺑُّﻨَﺎ »
“আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা; এমন প্রশংসা যা অঢেল, পবিত্র ও যাতে রয়েছে বরকত; যা বিদায় দিতে পারব না, আর যা হতে বিমুখ হতে পারব না, হে আমাদের রব।” [সহীহ সুনান আত-তিরমিযী]
অথবা তিনি বলেছেন:
« ﺍﻟﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃَﻃْﻌَﻤَﻨِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﻭَﺭَﺯَﻗَﻨِﻴﻪِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺣَﻮْﻝٍ ﻣِﻨِّﻲ ﻭَﻟَﺎ ﻗُﻮَّﺓٍ »
“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ আহার করালেন এবং এ রিয্ক দিলেন যাতে ছিল না আমার পক্ষ হতে কোনো উপায়, ছিল না কোনো শক্তি-সামর্থ্য।” [সহীহ সুনান আত-তিরমিযী]
ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো— যিনি তাদের ইফতার করিয়েছেন তার জন্য দো‘আ করা সম্পর্কে বিমুখতা। কারণ রোযাদার যদি কোনো সম্প্রদায়ের নিকট ইফতার করে তবে সুন্নত হলো তাদের জন্য দো‘আ করা যেরূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করতেন কোনো সম্প্রদায়ের নিকট ইফতার করলে; তিনি বলতেন,
« ﺃﻓﻄﺮ ﻋﻨﺪﻛﻢ ﺍﻟﺼﺎﺋﻤﻮﻥ ﻭﺃﻛﻞ ﻃﻌﺎﻣﻜﻢ ﺍﻷﺑﺮﺍﺭ ﻭﺗﻨﺰﻟﺖ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ »
“আপনাদের কাছে রোযাদাররা ইফতার করুন, আপনাদের খাবার যেন সৎলোকেরা খায়, আর আপনাদের জন্য ফিরিশতারা অবতীর্ণ হন।” [সহীহ আল-জামেউস সগীর]
অথবা বলতেন:
« ﺍﻟﻠﻬُﻢَّ، ﺃَﻃْﻌِﻢْ ﻣَﻦْ ﺃَﻃْﻌَﻤَﻨِﻲ، ﻭَﺃَﺳْﻖِ ﻣَﻦْ ﺃَﺳْﻘَﺎﻧِﻲ »
“হে আল্লাহ, যে আমাকে আহার করাবে আপনি তাদেরকে আহার করান এবং যে আমাকে পান করাবে আপনি তাদেরকে পান করান।” [মুসলিম]
অথবা তিনি বলতেন:
« ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻟَﻬُﻢْ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺭَﺯَﻗْﺘَﻬُﻢْ، ﻭَﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟَﻬُﻢْ ﻭَﺍﺭْﺣَﻤْﻬُﻢْ »
“হে আল্লাহ, আপনি তাদেরকে যে রিয্ক দান করেছেন তাতে তাদের জন্য বরকত দিন এবং তাদের গুনাহ ক্ষমা করুন, আর তাদের প্রতি দয়া করুন।” [মুসলিম]
ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহের অন্যতম হলো— ইফতারের সময় কিছু রোযাদারের সুন্নত প্রয়োগ সম্পর্কে অসাবধানতা। আপনি তাদেরকে দেখবেন তারা এটি (ইফতার) শুরু করার ক্ষেত্রে রুত্বাব, (কাঁচাখেজুর), খেজুর এবং পানি দ্বারা শুরু না করে অন্য কিছুকে অগ্রাধিকার দেয় এগুলোর উপস্থিতি সত্ত্বেও। অথচ সুন্নত হলো রোযাদার ইফতার করবে রুত্বাব দ্বারা অথবা খেজুর দ্বারা; যদি না পায় (এ দুটো) তবে কয়েক ঢোক পানি পান করবে।
ভুলসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো— সেহরী ত্বরান্বিত করা এবং ইফতার বিলম্বিত করা অথবা সেহরী কখনোই না করা অথবা মধ্যরাতে তা খাওয়ার মাধ্যমেই যথেষ্ট মনে করা। আর এ সবগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিক-নির্দেশনার পরিপন্থি। কারণ মুস্তাহাব হলো রোযাদার সেহরী খাবে ফজর (ভোর) উদয়ের পূর্বে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথানুযায়ী:
« ﺛﻼﺙ ﻣﻦ ﺃﺧﻼﻕ ﺍﻟﻨﺒﻮﺓ : ﺗﻌﺠﻴﻞ ﺍﻹﻓﻄﺎﺭ ﻭﺗﺄﺧﻴﺮ ﺍﻟﺴﺤﻮﺭ ﻭﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺸﻤﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ »
“নবুয়তের চরিত্রের মধ্যে তিনটি: ইফতার ত্বরান্বিত করা, সেহরী বিলম্বিত করা, সালাতে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা।” [ত্বাবরানী]
ভুলসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো— বালক-বালিকাদের সিয়াম পালনে অভ্যস্ত না করা। মুস্তাহাব হলো বালেগ হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে সিয়ামে অভ্যস্ত করা যেন তারা এর চর্চাও অনুশীলনে অভ্যস্ত হয়। বিশেষভাবে যদি তারা তা সহ্য করে যেরূপ রাবী‘ ইবন মু‘আউয়ায হতে বর্ণিত তিনি বলেন:
« ﻓَﻜُﻨَّﺎ ﻧُﺼَﻮِّﻡُ ﺻِﺒْﻴَﺎﻧَﻨَﺎ، ﻭَﻧَﺠْﻌَﻞُ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠُّﻌْﺒَﺔَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻌِﻬْﻦِ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺑَﻜَﻰ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡِ ﺃَﻋْﻄَﻴْﻨَﺎﻩُ ﺫَﺍﻙَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻹِﻓْﻄَﺎﺭِ »
“আমরা আমাদের বালক সন্তানদেরকে রোযা রাখাতাম আর তাদের জন্য পশমি সুতা হতে খেলনা বানাতাম, যদি তাদের মধ্যে কেউ কাঁদত খাবারের জন্য তবে আমরা তাকে তা (খেলনা) দিতাম, এ অবস্থায় থাকত ইফতার হওয়া পর্যন্ত।” [বুখারী ও মুসলিম একমত] [1]
ভুলসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো— কিছু রোগীর কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও রোযা রাখায় অটল থাকা। এটা ভুল; কারণ সত্য হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মানুষের থেকে সমস্যা তুলে নিয়েছেন এবং অসুস্থের জন্য তা ভাঙার ও পরবর্তীতে তা কাযা করার অনুমতি দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻓَﻤَﻦ ﺷَﻬِﺪَ ﻣِﻨﻜُﻢُ ﭐﻟﺸَّﻬۡﺮَ ﻓَﻠۡﻴَﺼُﻤۡﻪُۖ ﻭَﻣَﻦ ﻛَﺎﻥَ ﻣَﺮِﻳﻀًﺎ ﺃَﻭۡ ﻋَﻠَﻰٰ ﺳَﻔَﺮٖ ﻓَﻌِﺪَّﺓٞ ﻣِّﻦۡ ﺃَﻳَّﺎﻡٍ ﺃُﺧَﺮَۗ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ١٨٥ ]
“কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। তবে তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করবে।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৫]
ভুলসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো— রমযানে দিনের বেলা মিসওয়াক ব্যবহার করায় সমস্যা বা অসুবিধা আছে মনে করা। হয়তো তারা মনে করে মিসওয়াক ব্যবহার করলে রোযা ভাঙে আর এটি ভুল। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻟَﻮْﻻَ ﺃَﻥْ ﺃَﺷُﻖَّ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻟَﺄَﻣَﺮْﺗُﻬُﻢْ ﺑِﺎﻟﺴِّﻮَﺍﻙِ ﻣَﻊَ ﻛُﻞِّ ﺻَﻼَﺓٍ »
“আমি যদি উম্মতের উপর দুঃসহ মনে না করতাম তবে তাদেরকে প্রতি সালাতের সময় মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম।” [বুখারী ও মুসলিম একমত]
ইমাম বুখারী –রাহিমাহুল্লাহ— বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযাদারকে নির্দিষ্ট করেন নি অন্য কিছু থেকে।” আর শাইখ ইবন উসাইমিন –রাহিমাহুল্লাহ- বলেন, “আর মিসওয়াক দ্বারা রোযাদারের রোযা ভাঙে না বরং তা সর্বদাই দিনের শুরুতে অথবা শেষে রোযাদার ও বে-রোযাদার সবার জন্য সুন্নত।
আর সালাত ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর, আর তার পরিবার ও সকল সাথীদের উপর।
[1] তবে হাদিসটি আশুরার সাওম সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে এসেছে। [সম্পাদক]

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post