নবীজির চোখে সবচেয়ে বড় চোর কে?

সাধারণত যে ব্যক্তি অন্যের অগোচরে তার জিনিস কুক্ষিগত করে তাকে আমরা চোর বলে জানি। শরীয়তের দৃষ্টিতেও একে চোর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিন্তু হাদীস শরীফে সবচেয়ে বড় এবং জঘন্য চোর বলতে অন্য আরেকজনকে বুঝানো হয়েছে। অথচ সেই ব্যক্তি কোন চুরির কাজ করেনি। তারপরেও তাকে নবীজি (সা.) সবচেয়ে বড় চোর এবং জঘন্য চোর বলে আখ্যায়িত করেছেন।

নামাজ বেহেশতের চাবি। নামাজ ছাড়া জান্নাতের দরজা খুলা হবে না। নিয়মিত ফরয নামাজ আদায়ের মাধ্যমেই জান্নাতের দরজা খুলা হবে। হাশরের ময়দানে সর্বপ্রথম এ নামাজেরই হিসাব নেওয়া হবে। পবিত্র কুরআনুল কারীমে ৮২ বার নামাজের আদেশ করা হয়েছে।

হাদীসে এসেছে, রাসুল সা. বলেছেন, ‘সবচেয়ে জঘন্য চোর হলো সে ব্যক্তি যে নামাজে চুরি করে। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসুল সা: নামাজে চুরির অর্থ? তিনি বললেন, সে রুকু ও সিজদা ঠিকভাবে করে না।’ (তাবরানি ও ইবনে খোজায়মা)

আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা যারা নিজেদের নামাজে ভীতি ও বিনয় অবলম্বন করে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’ রাসুল সা. বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেয়া হবে। বান্দাহ যদি সন্তোষজনকভাবে নামাজের হিসাব দিতে পারে, তবে সে অন্যান্য আমলেও কামিয়াব হয়ে যাবে। আর যদি সে নামাজের হিসাব সন্তোষজনকভাবে দিতে না পারে, তবে তার অন্য আমলেও খারাপ হবে। আল্লাহর ঘরের আবাদকারী ও তার সেবাকারী লোকেরা আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ।’

তাছাড়া বিনা কারণে একাকী নামাজ পড়া ঠিক নয়। জামায়াতে নামাজের ব্যাপারে রাসুল সা. খুব বেশি তাকিদ দিতেন। এ বিষয়ে রাসুল সা. বলেছেন, ‘কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার জীবন! আমার ইচ্ছা হয়, কাঠ-খড়ি জমা করার নির্দেশ দিতে। অতঃপর কোনো একজনকে ইমামতি করার নির্দেশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখতে, কে কে নামাজ পড়তে আসেনি।’ অপর এক বর্ণনায় তিনি বলেছেন, ‘আমার ইচ্ছা হয়, যারা আজান শুনে মসজিদে হাজির হয় না তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

অন্য আরেক হাদীসে এসেছে, রাসুল সা. বলেছেন, ‘একবার এক অন্ধ ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সা এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সা. আমার এমন কেউ নেই যে আমাকে হাত ধরে মসজিদে আনবে। অতঃপর লোকটি মসজিদে উপস্থিত হওয়া থেকে অব্যাহতি ও ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি চান। রাসুল সা. ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি দেন। অনুমতি পেয়ে সেই লোকটি বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলে রাসুল সা. আবার তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাস করেন, তুমি কি আজান শুনতে পাও? লোকটি বললেন, হ্যাঁ, শুনতে পাই। তিনি বললেন, তবে তুমি মসজিদে উপস্থিত হবে।’ (সহীহ মুসলিম)

মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ ও নাসায়ী গ্রন্থে আবুদ দারদা রা: এক বর্ণনায় রাসূল সা. এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘কোনো জনবিরল এলাকায় যদি তিনজন ব্যক্তিও বাস করে, আর তারা যদি নামাজের জামায়াত কায়েম না করে তবে অবশ্যই শয়তান তাদের ওপর চড়াও হবে।’

অলসতার কারণে যাদের ঈমানে দুর্বলতা আছে তারা এশা ও ফজরের নামাজে মসজিদে আসে না বা কম আসে। সাহাবিরা এমন ব্যক্তি সম্পর্কে মুনাফিক হওয়ার সন্দেহ করতেন। তাবরানিতে আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. বলেছেন, ‘যখন আমরা কোনো ব্যক্তিকে ফজর ও এশার নামাজের জামায়াতে না পেতাম তখন তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা করতাম।’ (তাবরানি)

অকারণে ঘরে নামাজ পড়লে তা কবুল হবে না। হজরত আনাস ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি আজান শুনে কোনো ওজর ছাড়া মসজিদে না গিয়ে একা নামাজ আদায় করে, তার এ নামাজ কবুল করা হবে না। লোকেরা বললেন, ওজর কী? জবাবে রাসুল সা. বলেছেন, ভয় ও রোগ। অন্য বর্ণনায় ভয়ও রোগের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ভয় বলতে প্রাণের ভয়। দুশমন, হিং¯্র জন্তু অথবা সাপ বিচ্ছুর কারণে এ ভয় হতে পারে।

নামাজের হিফাজতকারীকে ইসলামের প্রকৃত হেফাজতকারী বলা হয়েছে। যার মন মসজিদের সাথে লটকানো থাকবে কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর ছায়ায় আশ্রয় পাবেন। সেদিন এ ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। 

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post