নেক সন্তান হওয়া যায় কিভাবে ?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ
জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান
‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের
উপস্থাপনায় বেসরকারি একটি টেলিভিশনের
জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের
উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
প্রশ্ন : নেক সন্তান কীভাবে হওয়া যাবে?
উত্তর : অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। নেক সন্তান
হওয়ার জন্য আমাদের চেষ্টা করা দরকার।
নেক সন্তানের পরিচয় আমরা কীভাবে পাব?
আমরা যদি দেখি রাসূল (সা.)-এর হাদিস থেকে,
তাহলে আমাদের বুঝতে সহজ হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিসের মধ্যে এরশাদ করেছেন,
‘যখন কোনো মানুষ মারা যায়, তখন তার আমলের
ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যায়। তার আমলনামার
মধ্যে আর কিছু লেখা হয় না, তিনটি আমল ছাড়া : ১.
সদকায়ে জারিয়া (সে মানবকল্যাণে যে দান-
সদকা করেছে, সেগুলো), ২. নেক সন্তান (যে
সন্তান তার বাবা বা মার জন্য অথবা উভয়ের জন্য
দোয়া করে), ৩. জ্ঞান (যে জ্ঞানের মাধ্যমে
মানুষ উপকৃত হয়ে থাকে পরবর্তী সময়ে)।’
এ হাদিস থেকে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে
অনেকেই এই ব্যাখ্যাই উপনীত হয়েছেন যে,
রাসূলুল্লাহ (সা.) এই হাদিসের মধ্যে একটি
গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। সেটা হচ্ছে, সেই
সন্তানই সত্যিকার নেক সন্তান হবে, যে সন্তান
পিতা-মাতার জন্য দোয়া করবে। যেহেতু
হাদিসটির মধ্যে রাসূল (সা.) এ কথা স্পষ্ট করে
দিয়েছেন।
তাই নেক সন্তান চিনতে হলে, দেখতে হবে সে
বাবা-মার জন্য দোয়া করে কি না। কোনো
সন্দেহ নেই, যিনি তার বাবা-মার জন্য দোয়া
করবেন, তিনি নেক সন্তানের অন্তর্ভুক্ত।
আর এই নেক সন্তান তৈরির জন্য বাবা-মার ওপর
অনেকগুলো দায়িত্ব ইসলাম দিয়েছে। মৌলিক
দায়িত্বগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যেটা
আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে সূরা
লোকমানের মধ্যে বলেছেন, যে সন্তান তার
বাবা-মার পক্ষ থেকে তার মুনিবের পরিচয় লাভ
করতে পেরেছে এবং তার মুনিবের হক সম্পর্কে
জানতে পেরেছে, সে নেক সন্তান হতে বাধ্য।
কারণ, যাকে তার মুনিবের পরিচয় দেওয়া হয়েছে,
সে তার প্রকৃত পরিচয় লাভ করতে পেরেছে এবং
সেই সন্তানই সত্যিকার নেক সন্তান হতে পারবে।
সে তার বাবা-মার পরিচয় লাভ করতে পারবে।
আল্লাহতায়ালা কোরআনের মধ্যে বলে
দিয়েছেন, ‘আপনার প্রতিপালক বিধান দিয়েছেন,
ফয়সালা করে দিয়েছেন, যে আল্লাহতায়ালা
ছাড়া আর কারো ইবাদত করবেন না। একমাত্র
ইবাদত হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য। আর
বাবা-মার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে।’
তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পরিচয় যদি
কোনো সন্তানকে দেওয়া হয়ে থাকে, সেই
সন্তান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পরিচয় লাভ
করার সঙ্গে নেক সন্তান হয়ে বাবা-মার
সত্যিকার যে মর্যাদা রয়েছে, যে হক বা
অধিকার রয়েছে, সেগুলো সে উপলব্ধি করতে
পারবে এবং এর মাধ্যমেই মানুষ নেক সন্তান হতে
পারে।
তাই আমরা আমাদের সন্তানদের যদি নেক সন্তান
হিসেবে গড়তে চাই, তাহলে আমাদের দায়িত্ব
হচ্ছে যেভাবে লোকমান তাঁর ছেলেকে উপদেশ
দিয়ে তাঁর ছেলের কাছে আল্লাহ রাব্বুল
আলামিনের পরিচয় কী হবে, আল্লাহ রাব্বুল
আলামিনের হক কী হবে, এগুলো তুলে ধরেছেন,
ঠিক সেভাবেই আমরা আমাদের সন্তানদের
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পরিচয় করিয়ে দেব।
তাহলে আমাদের সন্তান আল্লাহ রাব্বুল
আলামিনের পরিচয় লাভ করার সঙ্গে সঙ্গে বাবা-
মার কী পরিচয়, কী হক, তা সম্পর্কে জানতে
পারবে ও তাঁরা প্রকৃত নেক সন্তান হতে পারবে।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post