আমরা কি মসজিদের আদব মেনে চলছি ?

সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহ তা’য়ালার জন্য
যিনি সকল সমস্যার সমাধান নামাযের মধ্যেই
রেখেছেন এবং হাজার দরুদ ও সালাম নাজিল
হোক ঐ রাসূলের উপর যাহার মাধ্যমে আমরা
নামায পেয়েছি। হামদ্ ও সালাতের পর
হাদীসে বর্ণিত আছে যে, নামায বেহেস্তের
চাবি, সুতরাং জান্নাতে যেতে হলে একজন
মুসলমানকে সর্ব প্রথম পাঁচ ওয়াক্ত নামায
আদায় করতে হবে, হাদীসে আরও উল্লেখ
আছে, কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম নামাজের
হিসাব হবে। অতএব আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়া অতি জরুরী,
কেননা ফরজ নামাজ জামাতের সহীত পড়া
সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আর মসজিদের আদব
মেনে মসজিদে যাওয়া চাই। তাই নিুে
মসজিদের আদব সম্পর্কীয় কিছু বর্ণনা করা
হলো-
মসজিদে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সুন্নাত সমূহ:
প্রবেশ করার সুন্নাত ৫টি:
১। বিছমিল্লাহ পড়া, ২। দরুদ পড়া, ৩। দোয়া
পড়া, ৪। ইতিকাফের নিয়ত করা, ৫। ডান পা
দ্বারা প্রবেশ করা।
নিুের দোয়া পড়ার দ্বারা প্রথম ৩ সুন্নাত
আদায় হয়ে যাবে।
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﮧ ﻭﺍﻟﺼﻠﻮۃ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﯽ ﺭﺳﻮﻟﮧ
ﺍﻟﻠﮭﻢ ﺍﻓﺘﺤﻠﯽ ﺍﺑﻮﺍﺏ ﺭﺣﻤﺘﮏ
বাহির হওয়ার সুন্নাত পাঁচটি:
১। বিছমিল্লাহ পড়া, ২। দরুদ পড়া, ৩। দোয়া
পড়া, ৪। বাম পা দ্বারা বাহির হওয়া, ৫। বাম
পা জুতার উপর রেখে ডান পায়ের জুতা পরা।
নিুের দোয়া পড়ার দ্বারা প্রথম ৩ সুন্নাত
আদায় হয়ে যাবে।
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﮧ ﻭﺍﻟﺼﻠﻮۃ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﯽ ﺭﺳﻮﻟﮧ
ﺍﻟﻠﮭﻢ ﺍﻧﯽ ﺍﺳﺌﻠﮏ ﻣﻦ ﻓﻀﻠﮏ
মসজিদের ফজিলত
হযরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি
বলেন এক ইহুদি জ্ঞানী ব্যক্তি হুজুর পাক
(সা.) হতে জিজ্ঞেস করেন জমিনের মধ্যে
সর্বোত্তম জায়গা কোনটি? হুজুর পাক (সা.)
বললেন- তুমি জিব্রাঈল (আ.) আসার আগ
পর্যন্ত চুপ থাক। হুজুর পাক (সা.) চুপ থাকলেন
এবং ঐ ইহুদি ব্যক্তিও চুপ থাকলেন। অত:পর
জিব্রাঈল (আ.) আসলেন। তারপর হুজুর পাক
(সা.) তার থেকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলেন
জিব্রাঈল (আ.) বললেন- জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি
জিজ্ঞেসকারী থেকে বেশী জ্ঞাত নয়।
তারপর জিব্রাঈল (আ.) বললেন- ইয়া রাসূল
(সা.) আমি আল্লাহর এত নিকটবর্তী হয়ে
ছিলাম যতটা ইতিপূর্বে হইনি। হুজুর পাক (সা.)
জিজ্ঞেস করলেন কত নিকটে? জিব্রাঈল
(আ.) বললেন আমার এবং আল্লাহর মাঝে
সত্তর হাজার নূরের পর্দা ছিল। তারপর
আল্লাহ তায়ালা বলেন জমিনের মধ্যে
সর্বোত্তম জায়গা মসজিদ এবং সর্ব নিকৃষ্ট
জায়গা বাজার (মুসলিম, মিশকাত)
মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা প্রসঙ্গে
মাসয়ালা: যে সমস্ত কথা মসজিদের বাহিরে
বলা জায়েয, সে সমস্ত কথা মসজিদে বলা
নিষেধ এবং যে সমস্ত কথা মসজিদের
বাহিরে বলা নিষেধ সে সমস্ত কথা মসজিদে
বলা কঠোর নিষেধ। ফাতহুল ক্বদির নামক
গ্রন্থে আছে যে, মসজিদের মধ্যে দুুনিয়াবী
কথা বলা নেকী সমূহকে এমনভাবে ধ্বংস
করে দেয় যেমন আগুন লাকড়ীকে জ্বালিয়ে
ফেলে এবং মাদখাল লি-ইবনে হাজেব
গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লামা শফি (রহ.)
আদাবুল মাসাজিদ নামক গ্রন্থে লিখেন, যখন
কোন ব্যক্তি মসজিদের মধ্যে দুনিয়াবী কথা
বলা শুরু করে তখন ফেরেশতারা তাকে প্রথমে
বলে হে আল্লাহর বন্ধু চুপ থাক। তারপর যদি
চুপ না হয় তাহলে বলে হে আল্লাহর শত্র“ চুপ
থাক, তারপরও যদি কথা বলে তাহলে বলে হে
আল্লাহর অভিশপ্ত ব্যক্তি চুপ থাক।
মাসয়ালা: মসজিদে উচ্চ আওয়াজে কোরআন
তেলাওয়াত এবং উচ্চ আওয়াজে জিকির করা
সব না জায়েয। তবে হ্যাঁ যদি মসজিদে কোন
ব্যক্তি নামাজ অথবা তাসবীহে লিপ্ত না
থাকে তাহলে কতেক উলামা জায়েয
বলেছেন। আবার কিছু উলামা সর্ব অবস্থায়
উচ্চ আওয়াজে জিকির ও তেলাওয়াত করা
নাজায়েয বলেছেন।
সতর্কতা: আফসোস বর্তমান মানুষ মসজিদের
আদব থেকে বড়ই অমনোযুগী, অধিকাংশ মানুষ
মসজিদে এমনভাবে শোরগোল করে যেমন-
মঞ্চে, বাজার ইত্যাদির মধ্যেও হয় না। অথচ
শরীয়তে উচ্চ আওয়াজে তেলাওয়াত ও
যিকিরকে পর্যন্ত নাজায়েজ বলেছেন। নবী
করিম (সা.) বলেন বাজারের হট্টগোল থেকে
বেঁচে থাক এবং মসজিদকে দুনিয়াবী
কথাবার্তা দ্বারা বাজারের সাদৃশ্য করিও
না সুতরাং উপরোল্লেখিত আলোচনা দ্বারা
মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলার পরিণাম
সম্পর্কে জানা গেল। তাই আমাদের সকলের
উচিৎ এর থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহ
তায়ালা আমাদেরকে এর থেকে বেঁচে
থাকার তৌফিক দান করুন। (আমিন)
খুতবা সম্পর্কে
মাসয়ালা: যখন খুতবা শুরু হয়ে যায় তখন থেকে
সমস্ত উপস্থিত ব্যক্তির খুতবা শুনা ওয়াজিব।
চাই সে ইমামের নিকটবর্তী বসে, চাই দূরে
এবং এমন কাজ যার দ্বারা খুতবা শুনার মধ্যে
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় সে কাজ করা হারাম।
যেমন- খাওয়া, পান করা , কথাবার্তা বলা,
চলাফেরা করা, তাসবীহ পড়া, সালাম
দেওয়া, সালামের উত্তর দেওয়া বা
শরীয়তের কোন মাসায়েল বলা এ সমস্ত কাজ
যেমন নামাজরত অবস্থায় নিষেধ তেমনি
খুতবার সময়ও নিষেধ।
মাসায়ালা: যখন ইমাম খুতবার জন্য উঠে
দাঁড়ায় সে সময় থেকে কোন নামাজ পড়া,
পরস্পরে কথা বলা, এবং ইমাম খুতবা শেষ
করা পর্যন্ত কোন কাজ করা ইত্যাদি সব
নাজাযেজ।
সতর্কতা: অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, যখন
খুতবা শুরু হয় তখন আমরা টাকার বাক্স চালাই
বা কোন এক ব্যক্তি টাকা নেওয়া শুরু করি।
আর সে কারণে খুতবা শুনার মধ্যে মানুষের
মনোযোগ থাকেনা অথচ খুতবা শুনা ওয়াজিব।
আর উপরোল্লিখিত মাসয়ালা মতে খুতবার
সময় খাওয়া, পান করা নামাজ পড়া, সালাম
দেওয়া সালামের উত্তর দেওয়া, তাসবিহ
পড়া এ সমস্ত কাজ হারাম। কিন্তু আমরা
কতজন এ মাসয়ালা জানার চেষ্টা করি বা
জানলেও কয়জন আমল করি। আল্লাহ তায়ালা
আমাদেরকে এ মাসয়ালা সমূহ জানার এবং
আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)
নামাজি ব্যক্তির সামনে হাটা প্রসঙ্গে
হাদীস: আবু সাঈদ কুদরী (রা.) হতে বর্ণিত
আছে যে, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেন
নামাজি ব্যক্তির সামনে থেকে অতিবাহিত
হওয়ার দ্বারা নামাজের কোন ক্ষতি হয় না,
তবে সামর্থ অনুযায়ী অতিক্রমকারীকে বাধা
দেওয়া চাই। (সুবাহানল্লাহ বা ইশারা
দ্বারা) কেননা অতিক্রমকারী শয়তানের মত
নামাজি ব্যক্তির মনোযোগ আকৃষ্ট করে এবং
আল্লাহর থেকে মনোযোগ সরাতে চায়।
(বুখারী, মুসলিম)
হাদীস: রাসূল (সা.) বলেন- নামাজের সামনে
দিয়ে যাওয়া কত বড় গুনাহ তা যদি
অতিক্রমকারী জানত তাহলে সে আপন
স্থানে ৪০ বছর বসে থাকাকে ভাল মনে করত।
(আবু দাউদ)
মাসয়ালা: যদি নামাজি ব্যক্তির সামনে
খুঁটি দিয়ে নামাজ পড়ে তাহলে সামনে দিয়ে
যাওয়া যাবে। খুঁটি গোলাকারে আঙ্গুল
থেকে মোটা হতে হবে এবং লম্বা এক হাত
হতে হবে।
যে কাজ মসজিদে মাকরূহ বা নাজায়েজ তার
বর্ণনা
মাসয়ালা: কাঁচা রসুন, পিঁয়াজ খেয়ে
মসজিদে প্রবেশ করা নিষেধ কেননা নবী
করীম (সা.) বলেন যে ব্যক্তি গন্ধযুক্ত
জিনিস খেয়েছে সে যেন আমাদের মসজিদ
থেকে দূরে থাকে। কেননা যে জিনিস
দ্বারা মানুষ কষ্ট পায় তার দ্বারা
ফেরেশতারাও কষ্ট পায়। (বুখারী, মুসলিম) এর
দ্বারা বুঝা যায় বিড়ি সিগারেট পান করে
মসজিদে প্রবেশ করা যাবে না। রাসূল (সা.)
এর যুগে যে ব্যক্তির মুখে পিয়াজ ইত্যাদির
দুর্গন্ধ পাওয়া যেত তাকে হাত ধরে মসজিদ
থেকে বের করে দেওয়া হত।
মাসয়ালা: মসজিদে ঝগড়া করা না জায়েয।
মাসয়ালা: মসজিদে নাপাকি প্রবেশ করা
নাজাযেজ।
সতর্কতা: আজ আমরা কত ধরণের গন্ধযুক্ত
অবস্থায় মসজিদে আসি, সেদিকে আমাদের
কোন খেয়ালই থাকেনা এবং হরেক রকম
ময়লা নিয়ে মসজিদে আসি। যেমন অজুর পর
জুতার পানি বা জুতার নিচের ময়লা নিয়ে
মসজিদে ঢুকে পড়ি। এদিকে জুতার নীচ
থেকে পানি বা ময়লা মসজিদে পড়তে
থাকে। আর মসজিদে অবস্থান করার সময়
আহেতুক গল্প করে মসজিদকে বাজারের
সমতূল্য করি এসব কিছু হয়ে থাকে একমাত্র
আমাদেরই অবহেলার কারণে আজ আমাদের
অন্তরে মসজিদের গুরুত্ব নেই বললেই চলে,
অথচ এই মসজিদ দুনিয়ার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট
জায়গা। আমরা সাধারণত দুনিয়াতে যদি
কোন ধনী বা বড় ব্যক্তির বাড়ীতে যাই
তাহলে কত গুরুত্ব ও ভয় নিয়ে তার বাড়ী যাই।
অথচ যিনি সমস্ত সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা
বাদশাহর বাদশাহ আল্লাহ তায়ালার ঘর হচ্ছে
মসজিদ, তো এই মসজিদে প্রবেশ করার সময়
এবং অবস্থান করার সময় তার কত গুরুত্ব ও ভয়
আমাদের দিলে থাকা দরকার! আল্লাহ
তায়ালা আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় করুন। আর
এই আলোচনা মতে সকলকে আমল করার
তৌফিক দান করুক। (আমিন)

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post