“ ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ”
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য এবং দুরুদ ও সালাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহা মানব মুহাম্মদ(সঃ)সহ সকল সাহাবায়ে কেরাম ও সকল ইসলামি অনুসারিদের উপর ।
“আমর বিল মারূফ এবং নেহি আনিল মুনকার” ইসলামের একটি অত্যবশ্যকীয় দায়িত্ব। একটি মৌলিক স্তম্ভ এবং এ ধর্মের অনন্য বৈশিষ্ট্য। সংস্কার ও সংশোধনের বিশাল মাধ্যম। তার মাধ্যমে সত্যের জয় হয় এবং মিথ্যা ও বাতিল পরাভূত হয়। তার মাধ্যমে শান্তি ও সমৃদ্ধির বিস্তার ঘটে। কল্যাণ ও ঈমান বিস্তৃতি লাভ করে। যিনি আন্তরিকতা ও সততার সাথে এ দায়িত্ব পালন করেন তার জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার ও মর্যাদাপূর্ণ পারিতোষিক।আজকে আমাদের সমাজে ইসলামের এই স্তম্ভটাই পালনে আমরা সবচেয়ে বেশী অবহেলা করছি,আমাদের সমাজে নির্বিচারে অন্যায়,জুলুম,পাপ কার্য সংঘটিত হচ্ছে কিন্তু আমরা নিরব আমরা এমন ভাবে আখেরাতকে ছেড়ে দুনিয়া মুখি হয়ে গেছি যে এখন আর আমাদের কোন অনৈতিক কাজেই কোন প্রতিক্রিয়া হয় না।বরং আমরা কেউ কেউ অন্যায় কাজের সহযোগিতা করতেছি বিভিন্ন ভাবে।অথচ অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করাও এক ধরনের জেহাদ আর এই জেহাদ থেকেই আমরা মুসলমানেরা আজ বিমুখ।অথচ হাদিস শরিফে বর্নিত আছে,
– ﻋﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﻌﻴﺪ ﺍﻟْﺨُﺪﺭﻱِّ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲِّ ﺻَﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭﺳَﻠَّﻢ ﻗﺎﻝ : « ﺃَﻓْﻀَﻞُ ﺍﻟْﺠِﻬَﺎﺩِ ﻛَﻠِﻤَﺔُ ﻋَﺪْﻝٍ ﻋﻨﺪَ ﺳﻠْﻄَﺎﻥٍ ﺟﺎﺋِﺮٍ » ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ، ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﻗﺎﻝ : ﺣﺪﻳﺚٌ ﺣﺴﻦٌ .
আবু সায়ীদ আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যালেম শাসকের সামনে ইনসাফের কথা বলা উত্তম জিহাদ। (বর্ণনায়: আবু দাউদ ও তিরমিজী, ইমাম তিরমিজী হাদীসটিকে হাসান বলে মন্তব্য করেছেন)
আফসুস আজকে আমরা মানছি না আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের কোন আদেশ বা নির্দেশনা।অথচ তাহাই আমাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও আদর্শ হওয়া উচিত ছিল।
আল্লাহ সুবহানা হুয়া তায়ালা পবিত্র কোরআনে অসংখ্য আয়াত ও প্রিয় নবীর অগণিত হাদিস এর প্রমাণ বহন করে। এর অল্প কিছু নীচে বর্ননা করা হল।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ-
ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺃَﻭْﻟِﻴَﺎﺀُ ﺑَﻌْﺾٍ ﻳَﺄْﻣُﺮُﻭﻥَ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﻳَﻨْﻬَﻮْﻥَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻨْﻜَﺮِ ﻭَﻳُﻘِﻴﻤُﻮﻥَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭَﻳُﺆْﺗُﻮﻥَ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ ﻭَﻳُﻄِﻴﻌُﻮﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺳَﻴَﺮْﺣَﻤُﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰِﻳﺰٌ ﺣَﻜِﻴﻢٌ . ( ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ 71: )
অর্থাৎ আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক-সুহৃদ। তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। সালাত প্রতিষ্ঠিত করে, জাকাত দেয়, এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ রহম ও দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী। প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা : ৭১)
আয়াতে পরিষ্কার দেখা গেল যে আল্লাহ তাআলা “আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের” উপর রহমতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন|এবং এইটাও বলা হইছে যে ইহা ইমানদারদের একটি গুন।
মহান রাব্বুল আলামীন আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালন কারীদের প্রশংসা এবং তাদের পরিণাম ও শেষ ফল কল্যাণময় বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন :
ﻭَﻟْﺘَﻜُﻦْ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺃُﻣَّﺔٌ ﻳَﺪْﻋُﻮﻥَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﻭَﻳَﺄْﻣُﺮُﻭﻥَ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﻳَﻨْﻬَﻮْﻥَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻨْﻜَﺮِ ﻭَﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻤُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ ( ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ 104: )
আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে। আর তারাই সফল কাম। (আলে ইমরান : ১০৪)
এই আয়াতেও আল্লাহ “সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ” কারীদের সফল কাম বলেছেন অর্থাৎ এই কাজটি যারাই করবে তারাই সফল হবে।
আল্লাহ অন্য এক আয়াতে বলেছেন,”তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো, তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী। (আলে ইমরান: ১১০)
আল্লাহ এই আয়াতেও উম্মতি মুহাম্মদিকে শ্রেষ্ট উম্মত বলে সম্ভধন করেছেন কারন এই উম্মত “সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ” করে থাকে।এবং আগের উম্মতের বিষয়ে বলেছেন যে সেই উম্মত এই কাজটা করেনাই তাই তাদের মঙ্গল হয় নাই অর্থাৎ তারা ধবংশ প্রাপ্ত হয়েছিল।
আর এই উম্মতের ব্যাপারেও হুশিয়ারি আছে ঠি একই রকম,
– ﻋَﻦْ ﺣﺬﻳﻔﺔَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋﻨﻪ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻَﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭﺳَﻠَّﻢ ﻗﺎﻝ : « ﻭﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺴِﻲ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻟَﺘَﺄْﻣُﺮُﻥَّ ﺑﺎﻟْﻤﻌﺮُﻭﻑِ ، ﻭﻟَﺘَﻨْﻬَﻮُﻥَّ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻤُﻨْﻜَﺮِ ، ﺃَﻭْ ﻟَﻴُﻮﺷِﻜَﻦَّ ﺍﻟﻠَّﻪ ﺃَﻥْ ﻳَﺒْﻌﺚَ ﻋَﻠَﻴْﻜﻢْ ﻋِﻘَﺎﺑﺎً ﻣِﻨْﻪُ ، ﺛُﻢَّ ﺗَﺪْﻋُﻮﻧَﻪُ ﻓَﻼَ ﻳُﺴْﺘَﺠﺎﺏُ ﻟَﻜُﻢْ » ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﻗﺎﻝ : ﺣﺪﻳﺚٌ ﺣﺴﻦٌ .
হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সেই সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার জীবন, তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করবে আর মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে। যদি না কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের উপর শাস্তি পাঠাবেন। অত:পর তোমরা তাকে ডাকবে আর তোমাদের ডাকের সাড়া দেয়া হবে না। (বর্ণনায়: তিরমিজী, ইমাম তিরমিজী হাদীসটিকে হাসান বলে মন্তব্য করেছেন)
এখন আমাদেরই বুঝা উচিত আসলে আমাদের কি করা উচিত “সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ”করব নাকি আল্লাহর আযাবের জন্য প্রস্তুত থাকব।
আমর বিল মারূফ ও নেহি আমিল মুনকার-এর ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য সর্বাপেক্ষা জরুরি বিষয় হচ্ছে : সবর ধৈর্য এবং সহনশীলতা।
লোকমান হাকিম স্বীয় পুত্রকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন :
ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﺃَﻗِﻢِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭَﺃْﻣُﺮْ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﺍﻧْﻪَ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻨْﻜَﺮِ ﻭَﺍﺻْﺒِﺮْ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﺃَﺻَﺎﺑَﻚَ ﺇِﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ ﻣِﻦْ ﻋَﺰْﻡِ ﺍﻟْﺄُﻣُﻮﺭِ ( ﻟﻘﻤﺎﻥ 17: )
হে বৎস ! সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও। মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর, এটিই তো দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লোকমান : ১৭)
এই আয়াত দ্বারা ইটাই স্পষ্ট হয় যে এই কাজটি করা অনেক কঠিন এবং এই কাজটি করতে অনেক ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রয়োজন হয় সাথে সাহসেরও,কারন এই কাজটি করতে গেলে অনেক বিপদ আসবে বাঁধা আসবে আর এই সব বাঁধা-বিপদকে সরিয়েই এগিয়ে যেতে হবে তবেই আল্লাহর সন্তুষ্টি পাব আমরা।
“সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ”এর কাজটি আমাদের শুরু করতে হবে নিজেদের পরিবার থেকেই কারন পরিবার খারাপ কাজে লিপ্ত থাকবে আর আপনি বাইরের লোকদের নচিহত করে বেড়াবেন ভাল কাজ করার জন্য সেইটা কোন ভাবেই শোভনীয় নয় বরং এতে আপনি অসম্মানিত হবেন তাই পবিত্র ক্বোর’আনে পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের ভয়াবহ শান্তি হতে বাঁচিয়ে রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূরা আত-তাহরীমে এসেছে-
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻗُﻮٓﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢۡ ﻭَﺃَﻫۡﻠِﻴﻜُﻢۡ ﻧَﺎﺭٗﺍ ﻭَﻗُﻮﺩُﻫَﺎ ﭐﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﭐﻟۡﺤِﺠَﺎﺭَﺓُ ﻋَﻠَﻴۡﻬَﺎ ﻣَﻠَٰٓﺌِﻜَﺔٌ ﻏِﻠَﺎﻅٞ ﺷِﺪَﺍﺩٞ ﻟَّﺎ ﻳَﻌۡﺼُﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎٓ ﺃَﻣَﺮَﻫُﻢۡ ﻭَﻳَﻔۡﻌَﻠُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﻳُﺆۡﻣَﺮُﻭﻥَ ٦ ﴾ [ ﺍﻟﺘﺤﺮﻳﻢ : ٦ ]
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশ্তাকূল, যারা আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে অবাধ্য হয় না। আর তারা তাই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়।’’
অতএব বলা যায় যে, বিভিন্নভাবে এ পৃথিবীতে মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। আর তা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো পারস্পারিক সৎ ও কল্যাণকর কাজে সহযোগিতা ও অসৎ এবং গুনাহের কাজ বর্জন করা।
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ রাসূলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ গুণের পথিকৃত ছিলেন। তিনি নবুওয়তের পূর্বে অন্যায় অবিচার রুখতে হিলফুল ফুযুলে অংশ নিয়েছেন। ছোট বেলা থেকে মৌলিক মানবীয় সৎ গুণাবলী তাঁর চরিত্রে ফুটে উঠায় আল-আমিন, আল সাদিক উপাধিতে তিনি ভুষিত ছিলেন। তাঁর গুণাবলীর বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন-
﴿ ﻳَﺄۡﻣُﺮُﻫُﻢ ﺑِﭑﻟۡﻤَﻌۡﺮُﻭﻑِ ﻭَﻳَﻨۡﻬَﻯٰﻬُﻢۡ ﻋَﻦِ ﭐﻟۡﻤُﻨﻜَﺮِ ﻭَﻳُﺤِﻞُّ ﻟَﻬُﻢُ ﭐﻟﻄَّﻴِّﺒَٰﺖِ ﻭَﻳُﺤَﺮِّﻡُ ﻋَﻠَﻴۡﻬِﻢُ ﭐﻟۡﺨَﺒَٰٓﺌِﺚَ ﻭَﻳَﻀَﻊُ ﻋَﻨۡﻬُﻢۡ ﺇِﺻۡﺮَﻫُﻢۡ ﻭَﭐﻟۡﺄَﻏۡﻠَٰﻞَ ﭐﻟَّﺘِﻲ ﻛَﺎﻧَﺖۡ ﻋَﻠَﻴۡﻬِﻢۡۚ﴾ [ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ١٥٧ ]
‘‘তিনি সৎকাজের আদেশ করেন এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করেন। মানবজাতির জন্য সকল উত্তম ও পবিত্র জিনিসগুলো বৈধ করেন এবং খারাপ বিষয়গুলো হারাম করেন।’’
আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে তাঁর রিসালাতের পূর্ণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সত্ত্বা, যাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ বলেন, তাকে পাঠানো হয়েছে যাতে তিনি সৎকাজের আদেশ দেন, সকল অসৎ কর্ম হতে বারণ করেন, সব উত্তম বিষয় হালাল করেন এবং অপবিত্রগুলো হারাম করেন। এজন্যে রাসূল নিজেও বলেছেন-
« ﺑﻌﺜﺖ ﻷﺗﻤﻢ ﻣﻜﺎﺭﻡ ﺍﻷﺧﻼﻕ »
‘‘আমি সকল পবিত্র চরিত্রাবলী পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’’
আর সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম পরস্পরের সাথে সাক্ষাত হলে এ মহতি কাজটির কথা স্মরণ করে দিতেন। সেজন্য তাদের কেউ কেউ অধিকাংশ সময় মজলিশ হতে বিদায় বেলায় ও প্রথম সাক্ষাতে সূরা আছর তেলাওয়াত করতেন বলে কোনো কোনে বর্ণনায় এসেছে । আল্লাহ বলেন-
﴿ ﻭَﭐﻟۡﻌَﺼۡﺮِ ١ ﺇِﻥَّ ﭐﻟۡﺈِﻧﺴَٰﻦَ ﻟَﻔِﻲ ﺧُﺴۡﺮٍ ٢ ﺇِﻟَّﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻭَﻋَﻤِﻠُﻮﺍْ ﭐﻟﺼَّٰﻠِﺤَٰﺖِ ﻭَﺗَﻮَﺍﺻَﻮۡﺍْ ﺑِﭑﻟۡﺤَﻖِّ ﻭَﺗَﻮَﺍﺻَﻮۡﺍْ ﺑِﭑﻟﺼَّﺒۡﺮِ ٣ ﴾ [ ﺍﻟﻌﺼﺮ : ١، ٣ ]
‘‘সময়ের কসম, নিশ্চয় আজ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।”
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা মুমিনের গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত সৎ কাজের আদেশ দান ও অসৎকাজে বাধা দান মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব। মুমিন নিজে কেবল সৎকাজ করবে না, বরং সকলকে সে কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস চালাতে হবে। কেননা, তারা পরস্পরের বন্ধু। অতএব একবন্ধু অপর বন্ধুর জন্য কল্যাণ ব্যতীত অন্য কিছু কামনা করতে পারে না। এদিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেন-
﴿ ﻭَﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﻭَﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨَٰﺖُ ﺑَﻌۡﻀُﻬُﻢۡ ﺃَﻭۡﻟِﻴَﺎٓﺀُ ﺑَﻌۡﺾٖۚ ﻳَﺄۡﻣُﺮُﻭﻥَ ﺑِﭑﻟۡﻤَﻌۡﺮُﻭﻑِ ﻭَﻳَﻨۡﻬَﻮۡﻥَ ﻋَﻦِ ﭐﻟۡﻤُﻨﻜَﺮِ ﻭَﻳُﻘِﻴﻤُﻮﻥَ ﭐﻟﺼَّﻠَﻮٰﺓَ ﻭَﻳُﺆۡﺗُﻮﻥَ ﭐﻟﺰَّﻛَﻮٰﺓَ ﻭَﻳُﻄِﻴﻌُﻮﻥَ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُۥٓۚ ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﺳَﻴَﺮۡﺣَﻤُﻬُﻢُ ﭐﻟﻠَّﻪُۗ ٧١ ﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ٧١ ]
‘‘মুমিন নারী ও পুরুষ তারা পরস্পরের বন্ধু। তারা একে অপরকে যাবতীয় ভাল কাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় ও পাপ কাজ হতে বিরত রাখে, সালাত কায়েম করে, যাকাত পরিশোধ করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে। তারা এমন লোক যাদের প্রতি অচিরেই আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে।’’
কুরআনের অসংখ্য আয়াতে মুমিনের অন্যতম চরিত্র-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সকল স্থানে অন্যান্য গুণাবলীর পাশাপাশি অন্যতম গুণ হিসেবে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের অবতারণা করা হয়েছে।
আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন,
﴿ ﭐﻟﺘَّٰٓﺌِﺒُﻮﻥَ ﭐﻟۡﻌَٰﺒِﺪُﻭﻥَ ﭐﻟۡﺤَٰﻤِﺪُﻭﻥَ ﭐﻟﺴَّٰٓﺌِﺤُﻮﻥَ ﭐﻟﺮَّٰﻛِﻌُﻮﻥَ ﭐﻟﺴَّٰﺠِﺪُﻭﻥَ ﭐﻟۡﺄٓﻣِﺮُﻭﻥَ ﺑِﭑﻟۡﻤَﻌۡﺮُﻭﻑِ ﻭَﭐﻟﻨَّﺎﻫُﻮﻥَ ﻋَﻦِ ﭐﻟۡﻤُﻨﻜَﺮِ ﻭَﭐﻟۡﺤَٰﻔِﻈُﻮﻥَ ﻟِﺤُﺪُﻭﺩِ ﭐﻟﻠَّﻪِۗ ﻭَﺑَﺸِّﺮِ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ١١٢﴾ [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ١١٢ ]
‘‘তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী, আল্লাহর গোলামীর জীবন-যাপনকারী। তাঁর প্রশংসা উচ্চারণকারী, তাঁর জন্য যমীনে পরিভ্রমণকারী, তাঁর সম্মুখে রুকু ও সিজদায় অবনত। সৎ কাজের আদেশ দানকারী, অন্যায়ের বাধা দানকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমা রক্ষাকারী। হে নবী, তুমি এসব মুমিনদের সুসংবাদ দাও।”
সুবাহা আল্লাহ এই আয়াতের যেই সব গুনা বলির কথা বলা হয়েছে সেই গুলি ইমানদারদের গুনা বলি আর এই সব গুণাবলী যাদের মাঝে বিদ্যমান তাদের সুসংবাদ অর্থাৎ জান্নাতের সুসংবাদের কথা বলা হয়েছে।
সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের বাধা দান দীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মূলত: দীন হলো পরস্পরের কল্যাণ কামনা। আর এটি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ ব্যতীত অসম্ভব। কারণ সৎ কাজে উদ্বুদ্ধ করলে পরস্পর কল্যাণের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে পারে। আবার অসৎ কাজে বাধা দিলে ক্ষতি থেকে বিরত রাখা সহজ হয়। অতএব এটি দীনের অন্যতম মূলনীতি।অথচ আমরা এই কাজটি করছিনা বরং নিজেকে ভাল ইমানদার হিসাবে জাহির করছি,আমরা স্বগর্ভে বলছি নামাযতো পড়ছি,রোজাতো রাখছি তবে কেন আমরা ভাল মুসলমান নয়।এর উত্তর নিম্নের হাদিস গুলুতেই আছে,
– ﻋﻦ ﺃَﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪٍ ﺍﻟﺨُﺪْﺭﻱِّ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤِﻌْﺖُ ﺭﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪ ﺻَﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭﺳَﻠَّﻢ ﻳﻘُﻮﻝُ : « ﻣَﻦْ ﺭَﺃَﻯ ﻣِﻨْﻜُﻢ ﻣُﻨْﻜﺮﺍً ﻓَﻠْﻴﻐﻴِّﺮْﻩُ ﺑِﻴَﺪﻩِ ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻄﻊْ ﻓﺒِﻠِﺴَﺎﻧِﻪِ ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﺒﻘَﻠﺒﻪِ ﻭَﺫَﻟَﻚَ ﺃَﺿْﻌَﻒُ ﺍﻹِﻳﻤﺎﻥِ » ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ .
আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি : তোমাদের কেউ যখন কোন খারাপ কাজ হতে দেখবে তখন সে যেন তা হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয় (অর্থাৎ নিষেধ করবে) যদি সে এ সামর্থ না রাখে তাহলে তার মুখ দিয়ে। যদি এ সামর্থও না থাকে তাহলে অন্তর দিয়ে। আর এটা হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতর স্তর। (মুসলিম)
– ﻋﻦ ﺍﺑﻦِ ﻣﺴْﻌُﻮﺩٍ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋﻨﻪ ﺃَﻥَّ ﺭﺳﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪ ﺻَﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭﺳَﻠَّﻢ ﻗﺎﻝ : « ﻣَﺎ ﻣِﻦَ ﻧَﺒِﻲٍّ ﺑﻌَﺜَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻓﻲ ﺃُﻣَّﺔٍ ﻗَﺒْﻠِﻲ ﺇِﻻَّ ﻛﺎﻥ ﻟَﻪ ﻣِﻦ ﺃُﻣَّﺘِﻪِ ﺣﻮﺍﺭﻳُّﻮﻥ ﻭﺃَﺻْﺤَﺎﺏٌ ﻳَﺄْﺧﺬﻭﻥ ﺑِﺴُﻨَّﺘِﻪِ ﻭﻳﻘْﺘﺪُﻭﻥ ﺑﺄَﻣْﺮِﻩ، ﺛُﻢَّ ﺇِﻧَّﻬﺎ ﺗَﺨْﻠُﻒُ ﻣِﻦْ ﺑﻌْﺪِﻫﻢْ ﺧُﻠُﻮﻑٌ ﻳﻘُﻮﻟُﻮﻥ ﻣَﺎﻻَ ﻳﻔْﻌﻠُﻮﻥَ ، ﻭﻳﻔْﻌَﻠُﻮﻥ ﻣَﺎﻻَ ﻳُﺆْﻣَﺮﻭﻥ ، ﻓَﻤَﻦْ ﺟﺎﻫﺪﻫُﻢ ﺑِﻴَﺪﻩِ ﻓَﻬُﻮ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ، ﻭَﻣَﻦْ ﺟﺎﻫﺪﻫﻢ ﺑﻘَﻠْﺒِﻪِ ﻓَﻬُﻮ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ، ﻭﻣَﻦْ ﺟَﺎﻫَﺪﻫُﻢْ ﺑِﻠِﺴﺎﻧِﻪِ ﻓَﻬُﻮ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ، ﻭﻟﻴﺲ ﻭﺭﺍﺀَ ﺫﻟِﻚ ﻣِﻦ ﺍﻹِﻳﻤﺎﻥِ ﺣﺒَّﺔُ ﺧﺮْﺩﻝٍ » ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ .
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার পূর্বে আল্লাহ তাআলা কোন জাতির কাছে যে নবীই পাঠিয়েছেন, তাঁর সহযোগিতার জন্য তাদের মধ্য হতে কিছু সাথী থাকত। তারা তাঁর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরত এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করত। কিন্তু এদের পর এমন কিছু লোকের অভ্যূদয় ঘটল, তারা যা বলত নিজেরা তা করত না। আর এমন সব কাজ করত যার নির্দেশ তাদের দেয়া হয়নি। অতএব তাদের বিপক্ষে যে ব্যক্তি হাত দিয়ে জিহাদ করবে, সে ঈমানদার। যে তাদের সাথে অন্তর দিয়ে জিহাদ করবে সে ঈমানদার। আর যে তাদের সাথে মুখ দিয়ে জিহাদ করবে সে ঈমানদার। এ তিন অবস্থা ব্যতীত সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই। (মুসলিম)
– ﻋﻦ ﺍﺑﻦِ ﻣﺴْﻌُﻮﺩٍ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋﻨﻪ ﺃَﻥَّ ﺭﺳﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪ ﺻَﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭﺳَﻠَّﻢ ﻗﺎﻝ : « ﻣَﺎ ﻣِﻦَ ﻧَﺒِﻲٍّ ﺑﻌَﺜَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻓﻲ ﺃُﻣَّﺔٍ ﻗَﺒْﻠِﻲ ﺇِﻻَّ ﻛﺎﻥ ﻟَﻪ ﻣِﻦ ﺃُﻣَّﺘِﻪِ ﺣﻮﺍﺭﻳُّﻮﻥ ﻭﺃَﺻْﺤَﺎﺏٌ ﻳَﺄْﺧﺬﻭﻥ ﺑِﺴُﻨَّﺘِﻪِ ﻭﻳﻘْﺘﺪُﻭﻥ ﺑﺄَﻣْﺮِﻩ، ﺛُﻢَّ ﺇِﻧَّﻬﺎ ﺗَﺨْﻠُﻒُ ﻣِﻦْ ﺑﻌْﺪِﻫﻢْ ﺧُﻠُﻮﻑٌ ﻳﻘُﻮﻟُﻮﻥ ﻣَﺎﻻَ ﻳﻔْﻌﻠُﻮﻥَ ، ﻭﻳﻔْﻌَﻠُﻮﻥ ﻣَﺎﻻَ ﻳُﺆْﻣَﺮﻭﻥ ، ﻓَﻤَﻦْ ﺟﺎﻫﺪﻫُﻢ ﺑِﻴَﺪﻩِ ﻓَﻬُﻮ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ، ﻭَﻣَﻦْ ﺟﺎﻫﺪﻫﻢ ﺑﻘَﻠْﺒِﻪِ ﻓَﻬُﻮ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ، ﻭﻣَﻦْ ﺟَﺎﻫَﺪﻫُﻢْ ﺑِﻠِﺴﺎﻧِﻪِ ﻓَﻬُﻮ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ، ﻭﻟﻴﺲ ﻭﺭﺍﺀَ ﺫﻟِﻚ ﻣِﻦ ﺍﻹِﻳﻤﺎﻥِ ﺣﺒَّﺔُ ﺧﺮْﺩﻝٍ » ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ .
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার পূর্বে আল্লাহ তাআলা কোন জাতির কাছে যে নবীই পাঠিয়েছেন, তাঁর সহযোগিতার জন্য তাদের মধ্য হতে কিছু সাথী থাকত। তারা তাঁর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরত এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণ করত। কিন্তু এদের পর এমন কিছু লোকের অভ্যূদয় ঘটল, তারা যা বলত নিজেরা তা করত না। আর এমন সব কাজ করত যার নির্দেশ তাদের দেয়া হয়নি। অতএব তাদের বিপক্ষে যে ব্যক্তি হাত দিয়ে জিহাদ করবে, সে ঈমানদার। যে তাদের সাথে অন্তর দিয়ে জিহাদ করবে সে ঈমানদার। আর যে তাদের সাথে মুখ দিয়ে জিহাদ করবে সে ঈমানদার। এ তিন অবস্থা ব্যতীত সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই। (মুসলিম)
এই সব হাদিসের সামনে যদি আমাদের ইমানকে দাঁড় করাই তবে আমরা একশতে কত পাব একবার কি ভেবে দেখবনা?নাকি কোন নাম্ভারই পাবনা তাও একবার পরিক্ষা করা উচিত।
আজকে আমরা শেষ জামানায় দাঁড়িয়ে আছি যেই জামানায় ইমান রক্ষা করা খুবই কঠিন হবে।তাই আমাদের দরকার বেশী সৎ কাজ করা সৎ কাজের প্রতিযোগিতায় নামা।অথচ আমরা আজকে এই সব ভুলে দুনিয়া মুখি হয়ে গেছি ভুলে গেছি একদিন আল্লহার সামনে আমাদের দাঁড়াতে হবে আসামীর বেশে হিসাব দিতে হবে এই জীবনে যা কিছু কর্ম করেছি।
তাই আসুন আমরা “সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ” এর মতন মহান এবাদতটি বেশী বেশী করি নিজেদের ভাল ইমানদার বানাই নিজেদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করি।
মনে রাখবেন এই ইসলাম হইল নচিহতের দ্বীন সৎ উপদেশের দ্বীন।সারা বিশ্বকে বাঁচানোর দ্বীন সারা দুনিয়ার মানুষের কল্যানের দ্বীন,তাইতো এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
« ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﻨﺼﻴﺤﺔ . ﻗﻠﻨﺎ ﻟﻤﻦ ﻗﺎﻝ ﻟﻠﻠﻪ ﻭﻟﺮﺳﻮﻟﻪ ﻭﻷﺋﻤﺔ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻭﻋﺎﻣﺘﻬﻢ ».
দীন হলো মানুষের কল্যাণ কামনা। আমরা বললাম এটা কাদের জন্য? রাসূল বললেন, এটা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও সকল মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণের জন্য।”
সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ দীনের সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করে। মহান আল্লাহ যাবতীয় হালাল ও বৈধ বস্তুকে সৎকাজের নামান্তর এবং অবৈধ জিনিসকে অসৎ কাজ হিসেবে বারণ করার অধীন করেছেন।
অনেক এমন লোক আছে যে সে অন্যকে করতে না দেখা পর্যন্ত কোনও ভাল কাজ বা খারাপ কাজ করে না, তারপর অপরের দেখাদেখি সেটা করে বসে।
আর এজন্যই কোন ভাল বা মন্দ কাজের সূচনাকারী ( তার) অনুকরণকারীদের সকলের সমান পূর্ণ বা পাপের অধিকারী হবে। যেমন- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন-
« ﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺣَﺴَﻨَﺔً، ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮُﻫَﺎ، ﻭَﺃَﺟْﺮُ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﺑَﻌْﺪَﻩُ، ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃُﺟُﻮﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻲْﺀٌ، ﻭَﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺳَﻴِّﺌَﺔً، ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭِﺯْﺭُﻫَﺎ ﻭَﻭِﺯْﺭُ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻩِ، ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃَﻭْﺯَﺍﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻲْﺀٌ »
‘‘যে ব্যক্তি কোনও সুন্দর আদর্শের প্রচলণ করবে সে সেটার প্রতিফল (সাওয়াব) তো পাবেই তদুপরি কিয়ামত পর্যন্ত যারা তার অনুসরণে আমল করবে তাদের সকলের সম্মিলিত ‘আমলের সাওয়াবও ঐ প্রচলনকারী পাবে(অথচ) ঐ সকল অনুসরণকারীদের সাওয়াবে কোনরূপ ঘাটতি হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি কোন খারাপ আদর্শের প্রচলন করবে সে সেটার ফলে পাপী তো হবেই তদুপরি কিয়ামত পর্যন্ত যারা তার অনুসরণে আমল করবে তাদের সকলের সম্মিলিত পাপরাশির পরিমাণ পাপের দায়ীও সে ব্যক্তি হবে, (অথচ) ঐ সকল অনুসরণকারীদের পাপে এতটুকুও ঘাটতি হবে না। (মুসলিম: কিতাবুল ‘ইলম: ৮/৬১, কিতাবুল যাকাত: ৩/৮৭, আন- নাসায়ী: ৫/৭৮; ইবনে হাম্বল: ৪/৩৫৭-৩৫৯)
পরিশেষে বলতে চাই আসুন আমরা এই মুহুর্ত থেকেই নেমে পরি “সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ” এর কাজে নিজে বাঁচি এবং অন্যকেও বাঁচাই জাহান্নামের আগুন থেকে।
আল্লাহ আমাদের সবাই কে হেদায়েত দান করুন কবুল করুন “সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ” এই মহান আমলটি করার তৌফিক দান করুন-আমীন।
“ওয়া আখেরানা আনিলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন”