জান্নাত সম্পর্কে কিছু কথা

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। কেমন আছেন সবাই। আশা করি আল্লাহ রহমতে সবাই ভালোই আছেন। আজ আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে জান্নাত সম্পর্কে যা জানি এবং কুরআন-হাদিসে এই ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালা যা যা বলেছেন তা থেকে গুটি কয়েক হাদিস ও আয়াত নিয়াই এই পোষ্টটা সাজালাম। জানিনা কেমন হয়েছে বা ভুলের পরিমানই বা কত ? তাই ভুল-ত্রুটির জন্য প্রথমে আল্লাহ তা’য়ালার কাছে মাফ এবং আপনাদের নিকট ভুলগুলো দেখিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরুধ রইল। এবার যাওয়া যাক মূল আলোচনায়: জান্নাত চিরশান্তির জায়গা। সেখানে আরাম- আয়েশ, সুখ-শান্তি, আমোদ-প্রমোদ, চিত্ত বিনোদন ও আনন্দ-আহলাদের চরম ও পরম ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে ভোগ-বিলাস ও পানাহারের আতিশয্য। জান্নাতীরা যা কামনা করবে কিংবা কোনো কিছু পাওয়ার আহবান জানাবে, সকল কিছু পাবে। সেখানে সবাই যুবক হয়ে বাস করবে। শরীরে কোনো রোগ-শোক, জরাজীর্ণতা, মন্দা, বার্ধক্য, দুর্বলতা ও অপারগতা থাকবে না। যত ধরনের ফল-ফলাদি, খাদ্য-খাবার, পানীয়, দুধ, মধু সুস্বাদু খাবার সব খেতে পারবে। ভোগ-বিলাসের সকল উপায়-উপকরণ বিদ্যমান। সেগুলো স্বাদ ও গন্ধে অপূর্ব। আমোদ-প্রমোদ, ভ্রমন-বিহার, খেলা-ধুলা, বেড়ানো, বাজার করা ও শুভেচ্ছা-স্বাগত জানাতে পারবে। প্রাচুর্যের কোনো অভাব হবে না। দ্রুতগামী যানবাহনসহ মনের ইচ্ছা চোখের নিমির্ষে পূরণ করতে পারবে। জান্নাত কিসের তৈরী: হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা:)! জান্নাত কি দিয়ে তৈরী করা হয়েছে? রাসূলাল্লাহ্ (সা:) বললেন, পানি দ্বারা। আমরা বললাম, জান্নাত তৈরী সম্পর্কে কি আমাদের কিছু শুনাবেন ? রাসূলাল্লাহ্ (সা:) বললেন, একটি ইট স্বর্ণের আর একটি ইট রূপার। আর তার প্রলেপ হবে সুগন্ধি মেশক। মাটি হবে যাফরানের, কংকর হবে মুক্তা ও ইয়াকুত। যে তাতে প্রবেশ করবে, সে সকল প্রকার নিয়ামত ভোগ করবে। কোন প্রকার নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হবে না। অনন্তকাল থাকবে। তার আর মৃত্যু হবে না। পরিধেয় ভূষণ পুরাতন হবে না। যৌবন বিলুপ্ত হবে না। জান্নাতের বৃক্ষ ও নিয়ামত: হযরত আবু হুরায়রা (রা:) নবী করিম (সা:) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন, জান্নাতে একটি বৃক্ষ রয়েছে, কোন অশ্বারোহী একশত বছর চলার পরও এর ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন: ”জান্নাতীরা বিস্তৃত ছায়ায় থাকবে।” (সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত:৩০) আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন এরশাদ করেন : ‏« ﺃَﻋْﺪَﺩْﺕُ ﻟِﻌِﺒَﺎﺩِﻱ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴﻦَ ﻣَﺎ ﻻَ ﻋَﻴْﻦٌ ﺭَﺃَﺕْ، ﻭَﻻَ ﺃُﺫُﻥٌ ﺳَﻤِﻌَﺖْ، ﻭَﻻَ ﺧَﻄَﺮَ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﻠْﺐِ ﺑَﺸَﺮٍ، ﻓَﺎﻗْﺮَﺀُﻭﺍ ﺇِﻥْ ﺷِﺌْﺘُﻢْ ﻓَﻼَ ﺗَﻌْﻠَﻢُ ﻧَﻔْﺲٌ ﻣَﺎ ﺃُﺧْﻔِﻲَ ﻟَﻬُﻢْ ﻣِﻦْ ﻗُﺮَّﺓِ ﺃَﻋْﻴُﻦٍ ‏» “ আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন নেয়ামত তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং এমনকি কোনো মানুষ তা কল্পনাও করতে পারে না। এরপর তিনি বলেন , যদি তোমরা চাও , তাহলে নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়ো: ﴿ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻌۡﻠَﻢُ ﻧَﻔۡﺲٞ ﻣَّﺎٓ ﺃُﺧۡﻔِﻲَ ﻟَﻬُﻢ ﻣِّﻦ ﻗُﺮَّﺓِ ﺃَﻋۡﻴُﻦٖ ﺟَﺰَﺍٓﺀَۢ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﻳَﻌۡﻤَﻠُﻮﻥَ ١٧﴾ ‏[ ﺍﻟﺴﺠﺪﺓ : ١٧ ‏] যার অর্থ হলো: “ কেউ জানে না, তার জন্য কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত আছে। ” (সূরা সাজদাহ্: আয়াত:১৭) (বুখারী, ৩২৪৪; মুসলিম, ২৮২৪) আর জান্নাতের এক হাত জায়গা দুনিয়া ও তার সবকিছু থেকে অধিক শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন: ”আর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হল ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হল, সে তো সফলকাম হল।”(সূরা আলে ইমরান: আয়াত:১৮৫) (বুখারী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, দারিমী) জান্নাতের ফল নিম্নমূখী: হযরত মুজাহিদ (রহ:) বলেন, জান্নাতের মাটি হবে রূপার। ধূলি মেশেকের। বৃক্ষমূল রূপার আর তার শাখা-প্রশাখা মুক্তা ও যবরৎদ পাথর দ্বারা নির্মিত হবে। পাতা আর ফল নিম্নমূখী হবে। সুতরাং কেউ দাঁড়িয়ে খেলে কষ্ট হবে না । কেউ বসে খেলে কষ্ট হবে না। কেউ শুয়ে খেলেও কষ্ট হবে না। তারপর কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করলেন যার অর্থ: ”তার ফলসমূহ নিম্নমূখী করে নিবিড় ভাবে ঝুলিয়ে দেয়া হবে।” (সূরা দাহর: আয়াত:১৪) জান্নাত মোট আট প্রকার: আট প্রকার জান্নাতের কথাই আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকারগুলো হচ্ছে : 1) জান্নাতুল ফিরদাউস। 2) জান্নাতুন্ নায়ীম। 3) জান্নাতুল মাওয়া। 4) জান্নাতুল আদন। 5) জান্নাতু দারুস সালাম। 6) জান্নাতুদ দারুল খুলদ। 7) জান্নাতু দারুল মাকাম। 8) জান্নাতু দারুল কারার। জান্নাতে সর্বদা বসন্তকাল বিরাজ করবে। ফুল-ফলের সমাহার এবং সৌন্দর্য্য শ্যামলতা কখনো ম্লান হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, [ ﻟَﺎ ﻳَﺮَﻭۡﻥَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺷَﻤۡﺴٗﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺯَﻣۡﻬَﺮِﻳﺮٗﺍ ١٣ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻧﺴﺎﻥ : ١٣ অর্থ্যাৎ- ‘তাদেরকে সেখানে (জান্নাতে) না সূর্যতাপ জ্বালাতন করবে না শৈত্য প্রবাহ।’ (সূরা দাহর: ১৩) মহান আল্লাহ বলেন: [ ﻟَﺎ ﻳَﺴۡﻤَﻌُﻮﻥَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻟَﻐۡﻮٗﺍ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺄۡﺛِﻴﻤًﺎ ٢٥ ﺇِﻟَّﺎ ﻗِﻴﻠٗﺎ ﺳَﻠَٰﻤٗﺎ ﺳَﻠَٰﻤٗﺎ ٢٦ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻮﺍﻗﻌﺔ : ٢٥، ٢٦ অর্থঃ ‘সেখানে তারা বেহুদা ও অশ্লীল কথাবার্তা শুনতে পাবে না। যে কথাবার্তা হবে তা ঠিকঠাক ও যথাযথ (সম্প্রীতি পূর্ণ) হবে।’ (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ২৫-২৬) এক কথায়, পরম ও চরম শান্তি বলতে যা বুঝায়, তা সবই জান্নাতে পাওয়া যাবে। দুনিয়ার সুখ-শান্তির যত ব্যবস্থা আছে, জান্নাতের সুখ-শান্তির তুলনায় তা কিছুই না। বরং তা দুনিয়ার সকল আরাম-আয়েশকে হার মানাবে। মানুষ সুখ পেতে চায়। তাই পরম সুখ লাভের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া উচিত। আজ এ পর্যন্তই। কেমন লাগল জানাবেন।এতে অনুপ্রেরনা পাই আরও বেশি লিখার। আবারও বলছি আমি খুব বেশি কিছু জানি না এ বিষয়ে। তাই যদি কেউ কোন ভুল পান দয়াকরে জানাবেন। আগামী কোন্ দিন ”জান্নাতী” সম্পর্কে কিছু লিখার আশা আছে। সবাই ভালো থাকবেন এবং সকল জ্বীন ও ইনসানের জন্য হেদায়াতের দোয়া করবেন। আল্লাহ আমাকে ও আপনাদের সকলকে মাফ করুন। আমীন।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post