প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
ঈমান : বুনিয়াদ ও পরিণতি
ইসলামের পরিভাষায় ঈমান হল : আত্মার স্বীকৃতি বা
সত্যায়ন, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আত্মা ও অঙ্গ-
প্রত্যঙ্গের আমলকে ঈমান বলা হয়। ভালো
কাজে ঈমান বৃদ্ধি পায়, আর মন্দ কাজে ঈমান হ্রাস
পায়।
ঈমানের রুকনসমূহ
যে সকল ভিত্তির উপর ঈমান প্রতিষ্ঠিত তার সংখ্যা
মোট ছয়টি বলে নবী আলাইহিস সালাম ইরশাদ
করেছেন :
ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ : ﺃﻥ ﺗﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﻣﻼﺋﻜﺘﻪ ﻭﻛﺘﺒﻪ ﻭﺭﺳﻠﻪ ﻭﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻷﺧﺮ
ﻭﻧﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﻘﺪﺭ ﺧﻴﺮﻩ ﻭﺷﺮﻩ – ﺻﺤﻴﺢ ﻣﺴﻠﻢ : 9
১. আল্লাহর উপর বিশ্বাস। / ২. তার
ফেরেস্তাদের উপর বিশ্বাস। / ৩. তার
কিতাবসমূহের উপর বিশ্বাস। / ৪. তার প্রেরিত
নবী রাসুলদের উপর বিশ্বাস। / ৫. পরকালের
উপর বিশ্বাস। / ৬. নিয়তির ভালোমন্দ আল্লাহর
হাতে এ কথায় বিশ্বাস। (বুখারী ও মুসলিম)
ঈমানের শাখাসমূহ
ঈমানের ৭৭ টির বেশি শাখা রয়েছে।
সর্বোত্তম শাখা এ স্বীকৃতি প্রদান করা যে
আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। আর
ঈমানের নিম্নতম শাখা হলো কষ্টদায়ক বস্তু পথ
হতে অপসারণ করা এবং লাজুকতা ঈমানের অংশ।
(বুখারী ও মুসলিম)
সালফে সালেহীনের নিকট ঈমানের
মৌলিকতা :
প্রথমত: আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন। আল্লাহর
উপর বিশ্বাস স্থাপন চারটি বিষয় দ্বারা পূর্ণাঙ্গতা
প্রাপ্তি হয় বলে সালফে সালেহীন মনে
করেন।
১. আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস।
২. আল্লাহর রুবুবিয়্যাতে বিশ্বাস। অর্থাৎ একমাত্র
আল্লাহই সবকিছুর সষ্ট্রা। তিনি সব কিছুর প্রকৃত
মালিক, সব কিছুর প্রতিপালন তিনিই করেন।
৩. আল্লাহর উলুহিয়্যাতে বিশ্বাস। অর্থাৎ আল্লাহই
একমাত্র ইলাহ বা উপাস্য। এ ক্ষেত্রে কোন
মর্যাদাবান ফেরেস্তা বা আল্লাহ প্রেরিত কোন
নবী রাসূলের অংশিদারিত্ব নেই।
৪. আল্লাহর পবিত্র নাম ও গুণাবলীর উপর বিশ্বাস
স্থাপন। এর ধরণ হলো, কুরআনুল কারীম এবং
হাদীসে বর্ণিত আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলী
বান্দা শুধু তার জন্যই নির্ধারণ করবে। বর্ণনার
অবিকল বিশ্বাস স্থাপন করবে, ঐভাবেই তাকে
ডাকবে। কোন প্রকার ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ,
পরিবর্তন, পরিবর্ধনের আশ্রয় নিবে না। এবং তার
কোন প্রতিচ্ছবির কল্পনাও সে করবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﻟﻴﺲ ﻛﻤﺜﻠﻪ ﺷﻴﺊ ﻭﻫﻮ ﺍﻟﺴﻤﻴﻊ ﺍﻟﺒﺼﻴﺮ . ﺍﻟﺸﻮﺭﻯ 11:
তার মত কিছু নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
(সূরা শুরা: ১১)
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের ফলাফল :
চারটি নীতিমালার আলোকে আল্লাহর
অস্তিত্বে বিশ্বাস করা যাবতীয় কল্যাণ ও
সৌভাগ্যের মূল। এবং ঈমানের অবশিষ্ট রুকুনের
প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে বিষয়টি পূর্ণতা
পায়। উপরোল্লেখিত নিয়মাবলী অনুসারে
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা কর্তব্য। যখনই কোন
জাতি বা গোষ্ঠি আল্লাহর উপর ঈমানের
ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এ চারটি মৌলিক নীতিমালার
প্রতি দৃকপাতে অবহেলা প্রদর্শন করেছেন,
তখনই তাদের অন্তর নিমজ্জিত হয়েছে গহীন
অন্ধকারে। তারা পথ ভ্রষ্ট ও লক্ষ্যচ্যুত
হয়েছে। এবং ঈমানের অপরাপর ভিত্তির
ক্ষেত্রে ও সত্যের অনুসরণ করতে তারা
ব্যর্থ হয়েছে।
দ্বিতীয়ত : ফেরেস্তাদের প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন। ফেরেস্তাগণ অদৃশ্য জগতের
অধিবাসী। আল্লাহ তাদেরকে নূর বা জ্যোতি
থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে তার
আদেশের প্রতি পূর্ণাঙ্গ আনুগত্যের
যোগ্যতা এবং তার আদেশ বাস্তবায়নের শক্তি-
সামর্থ দান করেছেন। প্রভু অথবা উপাস্য হওয়ার
নূন্যতম কোন বৈশিষ্ট্য তাদের নেই। তারা
হলেন সৃষ্ট। আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করেছেন
এবং মর্যাদা দিয়েছেন তার সম্মানিত বান্দা
হিসেবে। বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে মানুষের সাথে
তাদের কোন মিল নেই। তারা পানাহার করেন না,
ঘুমান না, বিবাহের প্রয়োজন নেই তাদের। যৌন
চাহিদা হতে তারা মুক্ত, এমনকি যাবতীয় পাপাচার
হতেও। মানুষের নানান আকৃতিতে
আত্মপ্রকাশে তারা সক্ষম।
চারটি বিষয়ের মাধ্যমে ফেরেস্তার উপর
ঈমান পূর্ণ হয় :
১. আল্লাহ তাদের যে সকল গুণাবলীর বর্ণনা
দিয়েছেন সে অনুসারে তাদের অস্তিত্বের
প্রতি বিশ্বাস স্থাপন।
২. কোরআন এবং বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা তাদের
যে সকল নাম আমরা জেনেছি, সে গুলো
বিশ্বাস করা, যেমন জিব্রাইল, ইস্রাফিল, মিকায়ীল,
মালিক, মুনকার, নাকীর এবং মালাকুল মাউত
ফেরেস্তাবৃন্দ এবং তাদের মধ্য হতে যাদের
নাম আমাদের জানা নেই, তাদেরকেও
সাধারণভাবে বিশ্বাস করা।
৩. তাদের মধ্য হতে যার বৈশিষ্ট্যের কথা
কোরআনে এবং বিশুদ্ধ হাদীসে আমরা
জেনেছি, তার প্রতি বিশ্বাস পোষণ করা।
যেমন, জিব্রাইল আলাইহিস সালামের বৈশিষ্ট-তাকে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
দেখেছেন, যে আকৃতিতে আল্লাহ তাকে
সৃষ্টি করেছেন অবিকল সে আকৃতিতে। যিনি তার
ছয়শত ডানায় আচ্ছাদিত করেছিলেন আদিগন্ত।
এমনিভাবে আরশবহনকারী ফেরেস্তার বৈশিষ্ট্য
এই যে তার এক কান হতে অপর কানের দূরত্ব
হলো সাতশত বছরের পথ। সুবহানাল্লাহ!
৪. তাদের মধ্য হতে যাদের দায়িত্ব সম্পর্কে
আমরা অবগতি লাভ করেছি, তা বিশ্বাস করা। যেমন,
ক্লান্তিহীনভাবে দিনরাত তারা আল্লাহর তাসবীহ
পাঠে নিমগ্ন থাকেন। কোন প্রকার অবসাদ
তাদের স্পর্শ করে না। তাদের মধ্য
রয়েছেন, আরশবহনকারী, জান্নাতের
প্রহরী এবং জাহান্নামের রক্ষী। আরো
আছেন এক ঝাক ভ্রাম্যমান পবিত্র ফেরেস্তা,
যারা আল্লাহর আলোচনা হয় এমন স্থান সমূহকে
অনুসরণ করেন।
কতিপয় ফেরেস্তার বিশেষ কাজ :
• জিব্রাইল : অহী আদান প্রদানের দায়িত্বশীল,
এবং নবী রাসূলের নিকট অহী নিয়ে
অবতরণের দায়িত্ব তার প্রতি ন্যস্ত করা
হয়েছে।
• ইস্রাফিল : পুনরুত্থান দিবসে সিংগায় ফূৎকারের
দায়িত্ব তার প্রতি ন্যস্ত হয়েছে।
• মিকায়ীল : বৃষ্টি ও উদ্ভিদ উৎপন্নের
দায়িত্বশীল।
• মালিক : জাহান্নামের দায়িত্বশীল।
• মুনকার এবং নাকীর : তাদের উভয়ের প্রতি
কবরে মৃত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করার দায়িত্ব ন্যস্ত
করা হয়েছে।
• মালাকুল মাউত : রূহ কবজের দায়িত্ব তার।
• আল মুয়াক্কিবাত : বান্দাদের সর্বাবস্থায় রক্ষার
দায়িত্ব তাদের।
• আল কিরামুল কাতিবুন : আদম সন্তানদের দৈনন্দিন
আমল লেখার কাজে তারা নিয়জিত।
এছাড়া আরো অনেক ফেরেস্তা আছেন,
যাদের আমল সম্পর্কে আমরা অবগত নই।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﻭﻣﺎ ﻳﻌﻠﻢ ﺟﻨﻮﺩ ﺭﺑﻚ ﺍﻻ ﻫﻮ ﻭﻣﺎ ﻫﻲ ﺇﻻ ﺫﻛﺮﻯ ﻟﻠﺒﺸﺮ . ﺍﻟﻤﺪﺛﺮ :
31
আপনার প্রভুর বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই
জানেন। এ তো মানুষের জন্য উপদেশ মাত্র।
(সূরা মু্দ্দাসসির : ৩১) ফেরেস্তাদের উপর
বিশ্বাস স্থাপন মুসলমানদের ব্যক্তি জীবনের
নানান উপকারিতার কারণ। তন্মধ্যে কয়েকটি
নিম্নরূপ:
১. আল্লাহর বড়ত্ব এবং শক্তি সম্পর্কে জানা।
কারণ সৃষ্টির বড়ত্ব সষ্ট্রার বড়ত্বের প্রমাণ বহন
করে।
২. আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহের জন্য
কায়মনোবাক্যে এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করা যে, তিনি
ফেরেস্তা নিয়োজিত করে মানুষকে রক্ষা
করেছেন বিভিন্ন আপদ-বিপদ হতে ; তাদের
আমলগুলো লিপিবদ্ধ করা, আরশে তাদের
দোয়া পৌঁছে দেয়া, তাদের জন্য ইস্তেগফার,
পুরস্কারের সংবাদ দান-ইত্যাদি দায়িত্বগুলো তাদের
কাঁধে অর্পণ করেছেন।
৩. তারা আল্লাহর একান্ত অনুগত ও ইবাদতগুজার-
এজন্য তাদের মোহাব্বাত করা।
৪. ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে তাদের ঘনিষ্ঠ
হওয়া। কারণ, তাদের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার
প্রিয় বান্দাদের দৃঢ় মনোবল দান করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন –
ﺇﺫ ﻳﻮﺣﻲ ﺭﺑﻚ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺃﻧﻲ ﻣﻌﻜﻢ ﻓﺜﺒﺘﻮﺍ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺁﻣﻨﻮﺍ .
ﺍﻷﻧﻔﺎﻝ : 12
(ঐ মুহূর্তকে স্মরন করুন) যখন আপনার প্রভু
ফেরেস্তাদের নির্দেশ করলেন আমি
তোমাদের সাথে রয়েছি। সুতরাং, ঈমানদারদের
চিত্তসমূহকে ধীরস্থির রাখ। (সূরা আনফাল :১২)
৫. সর্বাবস্থায় আল্লাহর পর্যবেক্ষণের আওতায়
এবং পরিপূর্ণ সজাগ থাকা ; যেন মানুষের কাছ
থেকে বৈধ এবং নেক আমল ব্যতীত কোন
গুনাহ প্রকাশ না পায়। কারণ মানুষের আমলসমূহ
লেখার জন্য আল্লাহ তাআলা সম্মানিত ফেরেস্তা
নিয়োজিত করেছেন। তারা মানুষের সকল
কর্মকান্ড বিষয়ে অবগত হোন। তারা সর্বাবস্থায়
তাদের রক্ষণ ও পর্যবেক্ষণে সক্ষম।
৬. ফেরেস্তাদের কষ্ট হয় এই ধরণের কাজ
হতে বিরত থাকা। গুনাহের কাজ হলে তারা কষ্ট
পায়। এজন্য তারা কুকুর এবং প্রাণীর ছবি আছে
এমন ঘরে প্রবেশ করে না। দুর্গন্ধ বস্তু
তাদের কষ্টের উদ্রেক করে। যেমন-
মসজিদে পেঁয়াজ, রসুন খাওয়া অথবা খেয়ে
মসজিদে যাওয়া।
তৃতীয়ত: কিতাব সমূহের উপর ঈমান :
কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য এমন সব কিতাব, যার প্রতি
বিশ্বাস স্থাপন আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য, এবং
যা আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকূলের প্রতি রহমত ও
পরকালে তাদের জন্য নাজাত ও কল্যাণ স্বরূপ
জিব্রাইলের মাধ্যমে রাসূলদের উপর অবতীর্ণ
করেছেন।
কিতাব সমূহের উপর ঈমান আনার অর্থ :
১. এমন বিশ্বাস পোষণ করা যে, সকল কিতাব
আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে
আলোকবর্তিকা, হেদায়েতের আকর
হিসেবে, সত্য ধর্ম নিয়ে।
২. বিশ্বাস করা যে এ হলো আল্লাহর কালাম বা
কথা। কোন সৃষ্টির কালাম নয়। জিব্রায়ীল
আল্লাহর নিকট হতে শ্রবণ করেছেন। আর
রাসূল শ্রবণ করেছেন জিব্রায়ীল থেকে।
৩. বিশ্বাস করা সকল কিতাবে বর্ণিত যাবতীয় বিধি-
বিধান ঐ জাতির জন্য অবশ্যই পালনীয় ছিল,
যাদের উপর কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে।
৪. বিশ্বাস করা আল্লাহর সকল কিতাব একটি
অপরটিকে সত্যায়ন করে। পরস্পর কোন
বিরোধ নেই। তবে বিধি বিধানের ক্ষেত্রে
ভিন্নতা তাৎপর্যপূর্ণ বিশেষ কোন কারণে হয়ে
থাকে, যা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন।
৫. কিতাব সমূহ হতে যেগুলোর নাম আমারা জানি
সেগুলো বিশ্বাস করা। যেমন –
• আল কুরআনুল কারীম : যা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপর অবতীর্ণ
হয়েছে।
• তাওরাত: যা মুসা আলাইহিস সালামের উপর
অবতীর্ণ হয়েছে।
• ইঞ্জিল: যা ঈসা আলাইহিস সালামের উপর
অবতীর্ণ হয়েছে।
• যাবূর: যা দাউদ আলাইহিস সালামের উপর
অবতীর্ণ হয়েছে।
• ইব্রাহিম এবং মূসা আলাইহিস সালামের উপর
সহীফাহ সমূহ।
এছাড়া সাধারণভাবে ঐ সকল আসমানী কিতাবের
প্রতি বিশ্বাস করা যার নাম আমাদের জানা নেই।
৬. বিশ্বাস করা-আসমানী সকল কিতাব এবং তার বিধান
রহিত হয়েছে কুরআনুল কারীম অবতীর্ণের
মাধ্যমে। রহিত সে কিতাবগুলোর বিধান অনুসারে
আমল কারো জন্য বৈধ নয়। বরং সকলের প্রতি
কুরআনের অনুকরণ, অনুসরণ ফরজ। এ একমাত্র
কিতাব, যার কার্যকারিতা কেয়ামত অবধি অব্যাহত
থাকবে। অন্য কোন কিতাব কুরআনুল
কারীমের বিধানকে রহিত করতে পারবে না।
৭. নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত অন্যান্য
ঐশী গ্রন্থগুলো বাণী-বক্তব্যের সত্যতার
প্রতি কোরআনের মতই বিশ্বাস স্থাপন করা।
৮. এ মত পোষণ করা যে পূর্বের সকল
কিতাবে পরিবর্তন-বিকৃতি ঘটেছে। কেননা, যে
জাতির নিকট কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল, রক্ষার
দায়িত্বও তাদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু
কুরআনুল কারীম যাবতীয় বিকৃতি হতে সুরক্ষিত।
কেননা, এর রক্ষার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ আপন
দায়িত্বে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন
–
ﺇﻧﺎ ﻧﺤﻦ ﻧﺰﻟﻨﺎ ﺍﻟﺬﻛﺮ ﻭﺇﻧﺎ ﻟﻪ ﻟﺤﺎﻓﻈﻮﻥ . ﺍﻟﺤﺠﺮ : 9
নিশ্চয় আমি এই কোরআনকে অবতীর্ণ
করেছি এবং আমিই তার সংরক্ষক। (সুরা হিজর : ৯)
মুসলিম জীবনে আসমানী কিতাবসমূহের
উপর ঈমানের উপকারিতা :
আল্লাহ তাআলা তার একান্ত অনুগ্রহে পৃথিবীর
তাবৎ জাতির কাছে তাদের জন্য অশেষ
মঙ্গলজনক কিতাব অবতীর্ণ করেছেন-এ
ব্যাপারে পূর্ণ অবগতি ও জ্ঞান লাভ করা জরুরী।
১. আমাদের এ ব্যাপারে পূর্ণ অবগতি লাভ
করতে হবে যে, আল্লাহ তাআলা আপন
প্রজ্ঞায় প্রতিটি জাতির জন্য উপযুক্ত বিধান
প্রণয়ন করেছেন, এ তার পূর্ণ প্রজ্ঞারই
পরিচায়ক।
২. আল্লাহ যে যাবতীয় সংশয় হতে মুক্ত বিধান
সম্বলিত কুরআন আমাদের নবীর উপর
অবতীর্ণ করেছেন, সে জন্য তার শোকর
আদায় করা। এই কুরআন হলো কিতাব সমূহের
অনন্য শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী এবং এই কুরআন
অন্য সকল কিতাব সমূহের প্রকৃত বিধানাবলীর
রক্ষক।
৩. কুরআনের মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হওয়া,
এবং তার তিলাওয়াত করা, অর্থ বোঝা, মুখস্ত করা,
গবেষণা, বিশ্বাস, আমল এবং এ অনুযায়ী শাসন
ব্যবস্থা পরিচালনায় আত্মনিয়োগ করা।
চতুর্থত: নবী ও রাসূলদের প্রতি ঈমান আনয়ন
প্রথম রাসূল নূহ আলাইহিস সালাম। আল্লাহ তাআলা
বলেন :
ﺇﻧﺎ ﺃﻭﺣﻴﻨﺎ ﺇﻟﻰ ﻧﻮﺡ ﻭﺍﻟﻨﺒﻴﻴﻦ ﻣﻦ ﺑﻌﺪﻩ . ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : 163
আমি আপনার প্রতি অহী পাঠিয়েছি, যেমন করে
অহী পাঠিয়েছিলাম নূহের প্রতি এবং সে সমস্ত
নবী রাসূলের প্রতি যাঁরা তাঁর পরে প্রেরিত
হয়েছেন। (সূরা নিসা :১৬৩) এবং শেষ নবী ও
রাসূল হলেন, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
দলীল, আল্লাহর বাণী :
ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻣﺤﻤﺪ ﺃﺑﺎ ﺃﺣﺪ ﻣﻦ ﺭﺟﺎﻟﻜﻢ ﻭﻟﻜﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺧﺎﺗﻢ
ﺍﻟﻨﺒﻴﻴﻦ . ﺍﻷﺣﺰﺍﺏ : 40
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের
মধ্যে কোন ব্যক্তির পিতা নয়, বরং তিনি আল্লাহর
রাসূল এবং নবীদের মধ্যে সর্বশেষ নবী।
(সুরা আহযাব : ৪০) আদম আলাইহিস সালাম ছিলেন
আল্লাহর একজন নবী। আল্লাহর একত্ববাদের
প্রতি আহবান এবং তার সাথে শিরক থেকে মুক্ত
থাকার আহবানের ক্ষেত্রে সকল নবী-
রাসূলের আহবান ছিল অভিন্ন। প্রমাণ হিসেবে
নিম্নোক্ত আয়াতটি দ্রষ্টব্য—
ﻭﻟﻘﺪ ﺑﻌﺜﻨﺎ ﻓﻰ ﻛﻞ ﺃﻣﺔ ﺭﺳﻮﻻ ﺃﻥ ﺍﻋﺒﺪﻭﺍ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﺟﺘﻨﺒﻮﺍ
ﺍﻟﻄﺎﻏﻮﺕ . ﺍﻟﻨﺤﻞ : 36
নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ
করেছি এই বার্তা দিয়ে যে, তোমরা একমাত্র
আল্লাহর উপাসনা করবে এবং তাগুতকে প্রত্যাখান
করবে। (সূরা নাহল :৩৬) তবে বিধি-বিধান এবং
অবশ্যই করণীয় ফরজকাজ সমূহের আহবানের
ক্ষেত্রে সকলই একই বক্তব্যের অধিকারী
ছিলেন না। বরং প্রেক্ষাপট অনুসারে তাদের
বক্তব্য ছিল ভিন্ন ভিন্ন, অবস্থা ভেদে বিবিধ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
ﻟﻜﻞ ﺟﻌﻠﻨﺎ ﻣﻨﻜﻢ ﺷﺮﻋﺔ ﻭﻣﻨﻬﺎﺟﺎ – ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : 48
আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও
পথ দিয়েছি। (সূরা মায়েদা: ৪৮)
নবী রাসূলদের প্রতি ঈমানের প্রকৃতি
রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস কতিপয় বিশ্বাসকে
বোঝায়।
১. বিশ্বাস করা আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জাতির
মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ
বলেন :
ﻭﺇﻥ ﻣﻦ ﺃﻣﺔ ﺇﻻ ﺧﻼ ﻓﻴﻬﺎ ﻧﺬﻳﺮ – ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻔﺎﻃﺮ : 24
কোন জাতি নেই যে ,তার কাছে সর্তককারী
প্রেরণ করা হয়নি। (সুরা আল-ফাতির :২৪) আল্লাহ
তাআলা আরো বলেন-
ﻭﻟﻘﺪ ﺑﻌﺜﻨﺎ ﻓﻰ ﻛﻞ ﺃﻣﺔ ﺭﺳﻮﻟًﺎ – ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺤﻞ : 36
আমি প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল প্রেরণ
করেছি। (সূরা নাহল আয়াত:৩৬)
২. নবীগণ আল্লাহর কাছ থেকে যা প্রাপ্ত
হয়েছেন, তার ব্যাপারে ছিলেন পূর্ণ
সত্যবাদী—এ ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন। তাদের
ধর্ম ছিল ইসলাম। তাদের আহবান ছিল একত্ববাদ।
তাদের যে কোন একজনের রিসালাতকে
অস্বীকার এবং মিথ্যা মনে করার অর্থ হচ্ছে
সকলের রিসালাত অস্বীকার এবং এবং সকলের
প্রতি মিথ্যারোপ করা।
৩. এই অভিমত পোষণ করা যে তারা হলেন
নেককার, পরহেজগার রাসূল। আল্লাহ তাদের
উত্তম চরিত্র এবং প্রশংসনীয় গুণাবলী দ্বারা
শোভিত করেছেন। তাদের কাছে প্রেরিত
অহীর সবটুকুই তারা মানুষকে অবগত
করিয়েছেন, সামান্যতম গোপনতা, বৃদ্ধি ও কিংবা
বিকৃতির আশ্রয় তারা নেননি।
৪. কুরআনুল কারীমে এবং বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা
প্রমানিত তাদের যে সকল নাম আমরা জানি যেমন
—নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম—তা বিশ্বাস করা। এবং যে সকল
নাম আমরা অবগত নই, তাও সাধারণভাবে বিশ্বাস করা।
৫. কুরআনুল কারীম এবং বিশুদ্ধ হাদীসে
তাদের সম্পর্কে যে সকল বর্ণনা এসেছে
তা গ্রহণ করা।
৬. তাদের মধ্য হতে যাকে আমাদের নিকট
প্রেরণ করা হয়েছে তার শরীয়ত অনুসারে
জীবন যাপন করা। তিনি হলেন শেষ নবী
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
৭. বিশ্বাস করা যে, তাদের একে অপরের
মর্যাদার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে।
তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন উলুল আজমবৃন্দ: নূহ,
ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম। আবার কতিপয়কে আল্লাহ তাআলা
বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। যেমন
ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ কর্তৃক তার
বন্ধু বলে সম্বোধন করা; মূসা আলাইহিস
সালামের সাথে কথা বলা; মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবীদের মধ্যে
শ্রেষ্ঠ করা। ইব্রাহীমের মত তাকেও বন্ধু
হিসাবে গ্রহণ করা, এবং মেরাজের রজনীতে
তার সাথে কথোপকথন—ইত্যাদি।
৮. বিশ্বাস করা যে, কেউ নবী হওয়া তার আপন
ইচ্ছাধীন নয়, বরং আল্লাহর ইচ্ছাধীন। কেউ
নিজের চেষ্টায় নবী হতে পারবে না।
নবুয়্যতপ্রাপ্তির ধারাবাহিকতা আমাদের নবী
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
রেসালাতের মধ্য দিয়ে শেষ এবং পরিসমাপ্তি
ঘটেছে।
নবীদের উপর ঈমানের উকারিতা
নবীদের উপর ঈমান আনয়নের অনেক
উপকারিতা রয়েছে। তন্মধ্যে-
১. বান্দার উপর আল্লাহ অনুগ্রহ এবং দয়া সম্পর্কে
জানা যায় যে, তিনি তাদেরকে সঠিক পথে
পরিচালিত করার জন্য নবীদের প্রেরণ
করেছেন।
২. এ মহা মূল্যবান নেয়ামতের জন্য আল্লাহর
শোকর আদায় করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৩. প্রত্যেক নবী রাসূলের যোগ্যতানুযায়ী
তাদের প্রশংসা, সম্মান এবং মুহাব্বত করা।
৪. আল্লাহ তাআলার যে কোন আদেশ
বাস্তবায়নে তাদের কায়মনোবৃত্তিতে
আমাদের জন্য মহৎ শিক্ষা নিহিত রয়েছে।
যেমন, ইব্রাহিম আল্লাহর আদেশে তার
সন্তানকে কোরবানী করা। আল্লাহর দিকে
মানুষকে আহবানে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়া এবং
একাজে যে কোন ধরনের কষ্ট হাসি মুখে
সহ্য করা—ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রাখা আমাদের
জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয়।
৫. আল্লাহর আদেশ পালনের মাধ্যমে রাসূলের
মুহাব্বতের প্রকৃত বাস্তবায়নে আগ্রহী হওয়া।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
ﻟﻘﺪ ﻛﺎﻥ ﻟﻜﻢ ﻓﻲ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺳﻮﺓ ﺣﺴﻨﺔ ﻟﻤﻦ ﻛﺎﻥ ﻳﺮﺟﻮ ﺍﻟﻠﻪ
ﻭﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻵﺧﺮ ﻭﺫﻛﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺜﻴﺮًﺍ . ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻷﺣﺰﺍﺏ : 21
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং
আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য
রাসুলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।
(সুরা আহযাব : ২১)
পঞ্চমত: পরকালে বিশ্বাস করা
পরকালে বিশ্বাসে কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভূক্ত
রয়েছে।
১. পুনরুত্থানে বিশ্বাস : অর্থাৎ একদিন তাবৎ
মৃতদের জীবিত করা হবে এবং তারা পুনরুত্থিত
হবে বিশ্বপ্রতিপালকের দরবারে নগ্ন পায়ে,
উলঙ্গ ও খতনাবিহীন অবস্থায়। আল্লাহ তাআলা
বলেন,
ﺛﻢ ﺇﻧﻜﻢ ﺑﻌﺪ ﺫﻟﻚ ﻟﻤﻴﺘﻮﻥ ﺛﻢ ﺇﻧﻜﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺗﺒﻌﺜﻮﻥ .
ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻮﻥ : – 15 16-
এরপর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে। অত:পর
কেয়ামতের দিন তোমারা পুনরুত্থিত হবে। (সুরা
মুমিনুন : ১৫-১৬)
২। হিসাব এবং প্রতিদান দিবসে বিশ্বাস করা। বিশ্বাস
করা যে আল্লাহ তাআলা বান্দার ভালো এবং মন্দ
সকল কাজের হিসাব নিবেন এবং এর জন্য বান্দা
শাস্তি অথবা পুরস্কার লাভ করবে। আল্লাহ বলেন
—
ﻓﻤﻦ ﻳﻌﻤﻞ ﻣﺜﻘﺎﻝ ﺫﺭﺓ ﺧﻴﺮًﺍ ﻳﺮﻩ ﻭﻣﻦ ﻳﻌﻤﻞ ﻣﺜﻘﺎﻝ ﺫﺭﺓ ﺷﺮﺍً
ﻳﺮﻩ – ﺍﻟﺰﻟﺰﺍﻝ : 8
যে সামান্য পরিমাণ ভালো কাজ করবে সে তা
দেখতে পাবে এবং যে সামান্য পরিমাণ মন্দ কাজ
করবে তাও সে দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল :
৮)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন—
ﺇﻥ ﺇﻟﻴﻨﺎ ﺇﻳﺎﺑﻬﻢ . ﺛﻢ ﺇﻥ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﺣﺴﺎﺑﻬﻢ . ﺍﻟﻐﺎﺷﻴﺔ : -25 26
নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট, অত:পর
তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্ব। (সুরা গাশিয়াহ
:২৫-২৬)
৩. জান্নাত এবং জাহান্নামকে সত্য বলে জানা ও
বিশ্বাস করা এবং সৃষ্টির জন্য সর্বশেষ ও
চিরস্থায়ী আবাসস্থল বলে মনে করা। জান্নাত
হলো সুখ, শান্তি আরামের স্থান, যা সৃষ্টি করা
হয়েছে ঈমানদারদের জন্য। আর জাহান্নাম
হলো দু:খ,কষ্ট ও অশান্তির স্থান, যা
কাফেরদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
৪. যে সকল বিষয় মৃত্যুর পর সংঘটিত হবে বলে
আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সংবাদ দিয়েছেন যে সব বিষয়ের উপর ঈমান
আনা। যেমন—কবরে শাস্তি অথবা শান্তি, মুনকার
এবং নাকীর ফেরেস্তার প্রশ্ন করা, হাশরের
ময়দানে সূর্যের একেবারে মাথার নিকটবর্তী
হওয়া, পুলসিরাত, মিজান বা পাল্লা, আমলনামা, হাউজে
কাউসার, আল্লাহর নবীর সুপারিশ—সবই আছে এবং
সত্য।
পরকালে বিশ্বাসের সুফল :
পরকালে বিশ্বাসের অনেক লাভ রয়েছে।
তন্মধ্যে-
১. পরকালে আল্লাহর পুরষ্কার লাভের আশায়
বান্দার নেক আমলে আগ্রহী হওয়া।
২. পরকালে আল্লাহর শাস্তির ভয়ে বান্দার পাপাচার
থেকে দূরে থাকা।
৩. পরকালে আল্লাহর দেওয়া অফুরন্ত সুখ, শান্তি
অর্জনের আশায় ইহকালের যে আরাম-আয়েশ
তার হাতছাড়া হচ্ছে তাতেও মুমিনের অন্তরে
প্রশান্তি লাভ করা।
ষষ্ঠ: তাক্বদীর বা নিয়তির উপর বিশ্বাস করা :
তাকদীরে বিশ্বাসের অর্থ : আল্লাহর
রহস্যগুলোর মধ্যে একটি রহস্য হচ্ছে
তাক্বদীর বা নিয়তি। কোন নিকটতম ফেরেস্তা
অথবা প্রেরিত রাসূল পর্যন্ত এ সম্পর্কে কিছুই
জানেন না। তাক্বদীরের উপর ঈমানের অর্থ
বান্দা এ ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে,
আল্লাহ তাআলা তার ইলম এবং প্রজ্ঞার দাবি
অনুসারে কি হয়েছে, কি হবে, কি হচ্ছে সব
কিছু পূর্বেই নির্ধারণ করেন।
তাক্বদীরের উপর বিশ্বাসের স্তরসমূহ
তাক্বদীরে বিশ্বাসের চারটি স্তর রয়েছে :
১. আল ইলম বা জানা : এর দ্বারা উদ্দেশ্য সৃষ্টির
জন্য কোন বস্তু সৃষ্টির পূর্বেই তার
সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত এবং বিস্তারিত সবকিছুর
সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলার অবগত হওয়া।
আল্লাহ বলেন—
ﻭﻛﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻜﻞ ﺷﻲﺀ ﻋﻠﻴﻤﺎً – ﺍﻷﺣﺰﺍﺏ : 40
আল্লাহ সব বিষয় জ্ঞাত। (সুরা আহযাব :৪০)
২. আল-কিতাবাহ বা লিখন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য আকাশ
এবং পৃথিবীসমূহ সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে
আল্লাহ তাআলার সব কিছু লাউহে মাহফুজে
লেখে রাখা। দলীল, আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﻣﺎ ﺃﺻﺎﺏ ﻣﻦ ﻣﺼﻴﺒﺔ ﻓﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﻭﻻ ﻓﻲ ﺃﻧﻔﺴﻜﻢ ﺇﻻ ﻓﻲ
ﻛﺘﺎﺏ – ﺍﻟﺤﺪﻳﺪ 22:
পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের
উপর এমন কোন বিপদ আসে না, যা জগত সৃষ্টির
পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ করা হয় নি। নিশ্চয় এ
আল্লাহর পক্ষে সহজ। (সুরা হাদীদ : ২২)
৩. আল-মাশিয়্যাত বা ইচ্ছা : এর উদ্দেশ্য আল্লাহ যা
ইচ্ছে করেন তাই হয়, আর তিনি যা ইচ্ছে করেন
না তা কখনোই হয় না। দলীল, আল্লাহর বাণী:
ﻭﺭﺑﻚ ﻳﺨﻠﻖ ﻣﺎ ﻳﺸﺎﺀ ﻭﻳﺨﺘﺎﺭ – ﺍﻟﻘﺼﺺ : 68
আপনার প্রভু যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ
করেন। (সুরা আল-কাসাস, আয়াত:৬৮)
৪. আল-খালকু বা সৃষ্টি: এর উদ্দেশ্য সারা জগত
তার সকল অস্তিত্ব, রূপ এবং কর্মসহ একমাত্র
আল্লাহরই সৃষ্টি বা মাখলুক।
দলীল, আল্লাহ তাআলা বলেন-
ﻭﺧﻠﻖ ﻛﻞ ﺷﻲﺀ ﻓﻘﺪﺭﻩ ﺗﻘﺪﻳﺮﺍ . ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ : 2
তিনি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছেন, অত:পর
শোধিত করেছে পরিমিতভাবে। (সুরা আল-
ফোরকান :২)
তাকদীরে বিশ্বাসের ফযীলত
তাক্বদীরে বিশ্বাস দ্বারা অনেক লাভ
রয়েছে। তন্মধ্যে-
১. বান্দা আল্লাহর বড়ত্ব সম্পর্কে পরিচয় লাভ
করে, এবং তার জ্ঞানের প্রশস্ততা, ব্যাপকতা এবং
জগতে ছোট-বড় সব কিছু তার আয়ত্বে তা
সম্পর্কে জানে। আরো জানে তার
রাজত্বের পরিপূর্ণতা সম্পর্কে যে, তার অনুমতি
ছাড়া সেখানে কোন কিছুই সংঘঠিত হয় না।
২. বান্দা তার সকল কাজে একমাত্র আল্লাহ তাআলার
উপর নির্ভর করবে। কোন বস্তুর উপর নয়।
কারণ সব কিছুই আল্লাহরই কুদরতে চলে।
৩. মানুষ কোন কাজে সফলতা পেলে অহংকার
করবে না। কারণ এ সফলতা আল্লাহর পক্ষ
থেকে তার উপর অনুগ্রহ মাত্র। আল্লাহই তাকে
এই কাজ করার যোগ্যতা ও তাওফীক দান
করেছেন।
৪. কোন প্রিয় বস্তুর বিরহে অথবা কোন
বিপদে দেখা দিলে অন্তরে নিশ্চয়তা ও
প্রশান্তি আনয়ন। কারণ সকল কিছুই আল্লাহর ইচ্ছা
এবং হুকুমে হচ্ছে।
তাক্বদীরে নির্ভরতার যুক্তি দেখানোর
শরয়ী বিধান
তাক্বদীরে বিশ্বাসীর উপর অপরিহার্য যে,
সে তাক্বদীরকে প্রমাণ হিসাবে পেশ করে,
ওয়াজিব এবং হারাম কাজে জড়িত হতে পারবেনা এবং
নেক কাজে অলসতা প্রদর্শন সে করবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা
হয়েছিল যে, কে জান্নাতে প্রবেশ করবে,
আর কে জাহান্নামে যাবে তা কি জানানো
হয়েছে? তিনি বললেন : হ্যাঁ, প্রশ্নকারী বলল,
তাহলে আমলের প্রয়োজন কি ? উত্তরে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
প্রত্যেকের জন্য সে পথে গমন সহজতর
করা হয়েছে যে উদ্দেশ্যে তাকে সৃষ্টি করা
হয়েছে। (মুসলিম)
যে ব্যক্তি তাকদীরকে গুনাহের কাজের
বৈধতার যুক্তি হিসাবে পেশ করে, সে বলে
আল্লাহ পাপ কাজ করাকে আমার নিয়তিতে লিপিবদ্ধ
করেছেন, তাই আমি তা ছাড়বো কিভাবে ? এই
ব্যক্তির অবস্থা হল, কেউ যদি জোরপূর্বক তার
সম্পত্তি নিয়ে যায়, অথবা তার ইজ্জতহানী করে,
সে বলে না এটা আমার নিয়তিতে ছিল, করার কিছুই
নেই। বরং সে তার সম্পদ উদ্ধার এবং অপরাধীর
বিচারের চেষ্টা চালিয়ে যায়। সুতরাং,
তাক্বদীরের দোহাই দিয়ে গুনাহ করা কিভাবে
বৈধ হবে ? আর সে যখন কোন গুনাহ করে
বলবে, এটা আমার তাক্বদীরে ছিল ? অতঃপর তার
গুনাহের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। বুঝার বিষয়
হল মানুষ জানে না ভবিষ্যতে কি হবে? তাহলে
সে কিভাবে মনে করে যে, আল্লাহ তার
নিয়তিতে গুনাহ করা লিপিবদ্ধ করেছেন এবং সে
গুনাহ পরিত্যাগ করে না। আল্লাহ তাআলা রাসূল
প্রেরণ করেছেন, কিতাব অবতীর্ণ
করেছেন। সিরাতে মুস্তাকীমের বর্ণনা
দিয়েছেন। আকল-বুদ্ধি, চোখ, কান দান
করেছেন। ভালো-মন্দ যাচাই করে চলার
যোগ্যতাও আল্লাহ তাআলা মানুষকে
দিয়েছেন। অতএব এই সব বলে কেউ তার
দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। আমাদের জানা দরকার
বিবাহ ছাড়া যেমন সন্তান আসে না, খাবার ছাড়া
যেমন পরিতৃপ্তি আসে না, তেমনি আল্লাহর
আদেশগুলো বাস্তবায়ন এবং নিষেধগুলো
বর্জন ছাড়া জান্নাতে যাওয়া যাবে না। তাই মানুষের
জন্য অবশ্যই করণীয় হল আল্লাহ খুশি হন এমন
কাজ করা এবং আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কাজ
বর্জন করে জান্নাতের অনুসন্ধান করা এবং এই
জন্য আল্লাহ তাআলার সাহায্য কামনা করা। দুর্বলতা
এবং অলসতা পরিহার করা। বাসনা করলেই জান্নাতে
যাওয়া যাবে না। কারণ এটা আল্লাহর পণ্য। আর
আল্লাহর পণ্য খুবই মূল্যবান।
হ্যাঁ, দুনিয়াতে বিপদ আপদ তো আসবেই। এটা
দূর করা সম্ভব নয়। মানুষের জানা উচিত বিপদ আপদ
তাক্বদীরে আছে বলেই হয়। তখন বলবে
“ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”। বিপদে
ধৈর্যধারণ করা, খুশি থাকা, মেনে নেওয়া পাক্কা
ঈমানদারের কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন-
ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺍﻟﻘﻮﻱ ﺧﻴﺮ ﻭﺃﺣﺐ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﻭﻓﻲ
ﻛﻞ ﺧﻴﺮ . ﺍﺣﺮﺹ ﻋﻠﻲ ﻣﺎ ﻳﻨﻔﻌﻚ ﻭﺍﺳﺘﻌﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﻻ ﺗﻌﺠﺰ، ﻭﺇﻥ
ﺃﺻﺎﺑﻚ ﺷﻴﺊ ﻓﻼ ﺗﻘﻞ : ﻟﻮ ﺃﻧﻲ ﻓﻌﻠﺖ ﻛﺬﺍ ﻭﻛﺬﺍ ﻭﻟﻜﻦ ﻗﻞ : ﻗﺪﺭ
ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻣﺎ ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻌﻞ ﻓﺈﻥ ﻟﻮ ﺗﻔﺘﺢ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ - ﺭﻭﺍﻩ
ﻣﺴﻠﻢ : 4816
দূর্বল মুমিনের তূলনায় সবল মুমিন উত্তম এবং
আল্লাহর প্রিয়। প্রত্যেকের মাঝেই কল্যান
রয়েছে। তুমি প্রচেষ্টা কর তোমার
মঙ্গলের জন্য। এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা কর।
অক্ষমতা প্রকাশ করো না। আর যদি তোমার
কোন বিপদ দেখা দেয় বলো না, “যদি আমি
এভাবে করতাম তাহলে এরকম হতো। বরং বল :
আল্লাহই আমার নিয়তিতে এটা রেখেছেন। আর
আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। কারণ ‘যদি’ শব্দটি
শয়তানের কাজের পথ খুলে দেয়। (মুসলিম
শরীফ)
Tags
ধর্ম ও জীবন